অশ্লীলতা (ব্যভিচার, ধর্ষণ, সমকামিতা) মুক্ত সমাজ গড়তে আলকুরআনের অবদান

অশ্লীলতা মানব সমাজের কলুষিত অধ্যায়। প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে অশ্লীলতা একটি খরাপ কাজ। পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম নেই যেখানে অশ্লীলতা নিষিদ্ধ নয়। অশ্লীলতা শুধু ব্যক্তির জীবনকেই কলুষিত করে না বরং পরিবার, সমাজ ও সভ্যতাকে বিনাশ করে দেয়। যে সমাজে যত বেশী অশ্লীলতার চর্চা হবে সে সমাজে পারিবারিক বন্ধন তত ফিকে হতে থাকবে। পৃথিবীর ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য পারিবারিক বন্ধনের কোন বিকল্প নেই। কেননা পরিবার ছাড়া সন্তান উৎপাদনের বৈধ কোন প্রতিষ্ঠান নেই। আর মানুষ যখন পরিবারের দায় দায়িত্ব গ্রহণ ছাড়াই তার জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে তখন সে আর পরিবার গঠনের ঝামেলা পোহাবে না। ফলে মানুষ জন্মের স্বাভাবিক ক্রমধারা ব্যাহত হবে। যার বাস্তব উদাহরণ পৃথিবীর ঐসকল দেশ যেখানে অশ্লীলতা সয়লাব চলছে। সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা ঘোষণা করেও নারীদের গর্ভধারণে উৎসাহিত করতে পারছে না। ফলে জনসংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। এজন্য বলা যায় অশ্লীলতা এমন এক মহা বিপর্যয় যা সুনামি থেকেও মারাত্মক। কেননা সুনামি একটা দেশ বা মহাদেশকে ধ্বংস করতে পারে আর অশ্লীলতা গোটা পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

আমরা এখানে দৈনিক নয়া দিগন্তের একটা প্রতিবেদন উল্লেখ করছি।
“বিশ্বে গত ১২ বছরে মানুষ বেড়েছে ১০০ কোটি । আগামী ১৩ বছরে যোগ হবে আরও ১০০ কোটির বেশি। জাতিসঙ্ঘের ২০১৭ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বিশ্বে মানুষের সংখ্যা ৭৬০ কোটি। এ যখন বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র তখন এ শতাব্দী শেষেই বিশ্বের অনেক জনবহুল অঞ্চল মানুষের অভাবে বিরানভূমিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। এর কারণ অনেক দেশে দ্রুত কমছে জনসংখ্যা। এর কারণ অনেক দেশে প্রতি দুইজন মানুষের মৃত্যুর বিপরীতে জন্ম নিচ্ছে একটি শিশু। ক্রমাগতভাবে জনসংখ্যা কমছে এমন দেশের সংখ্যা ৫১টি হওয়ার কথা বলা হয়েছে জাতিসঙ্ঘের ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে । এর মধ্যে অনেক দেশে গত ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে জনসংখ্যা বাড়েনি; বরং কমেছে। ২০৫০ সালের মধ্যেই অনেক দেশের জনসংখ্যা বর্তমানের চেয়ে তিন ভাগের এক ভাগ কমে যাবে মর্মে দেখানো হয়েছে জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন-সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে। জনসংখ্যার অব্যাহত এ হ্রাসকে অনেকে ‘ডেমোগ্রাফি টাইম বোম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যদি জন্ম হার বাড়াতে সক্ষম না হয় এবং বিদেশীদেরও গ্রহণ না করা হয় তাহলে এক সময় মানুষের অভাবে কোনও কোনও দেশ বিরানভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিলুপ্ত হতে পারে অনেক সভ্যতা এবং তা এ শতাব্দীর শেষেই। গত কয়েক দশক ধরে জন্মহার না বাড়ার কারণে ইতোমধ্যে বুলগেরিয়া, স্পেন, জাপান এবং ইউরোপের প্রায় সব দেশের অনেক গ্রাম উজাড় হয়ে গেছে। বুলগেরিয়া, স্পেন ও জাপানের অনেক গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে মানুষ না থাকায় । অনেক বাড়িঘর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বিবিসি, রয়টার্স, গার্র্ডিয়ানসহ অনেক বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম ছাড়াও সংশ্লিষ্ট দেশের গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। বুলগেরিয়ার কোনও কোনও পাড়া ও গ্রামে মাত্র এক থেকে ৩০ জন মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে একসময় ছিল মানুষের কোলাহলে মুখর। দেশটিতে প্রতি হাজারে মারা যায় ১৬ জন আর জন্ম নেয় ৯ জন। এ তথ্য গত বছর ৩১ ডিসেম্বরের। পর্তুগালে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মারা গেছে ৫২ হাজার ৩৬৩ জন আর জন্ম নিয়েছে ৩৪ হাজার ৪৮৩ জন। ইতালিতে গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মারা গেছে এক লাখ ৮৫ হাজার মানুষ। আর একই সময়ে জন্ম নিয়েছে এক লাখ আট হাজার শিশু। জাতিসঙ্ঘের ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিশ্বে একজন নারীর গড়ে ৪ দশমিক ৫ জন সন্তান ছিল। ২০১৫ সালে তা ২ দশমিক ৫-এ নেমে এসেছে। জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখার জন্য একজন নারীর গড়ে ২ দশমিক ১ জন করে সন্তান থাকা প্রয়োজন। সেখানে গোটা ইউরোপে এ হার গড়ে মাত্র ১ দশমিক ৫৫। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আরও অনেক জনবহুল দেশেও এ হার একই। বিশ্বে দ্রুত জনসংখ্যা কমছে এমন শীর্ষ দশটি দেশের তালিকা করা হয়েছে জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে । এর সব দেশই পূর্ব ইউরোপের। এসব দেশে একজন নারীর গড়ে সন্তান রয়েছে ১ দশমিক ৩ জন। স্পেনে এ হার ১ দশমিক ২। জার্মানির মতো অনেক দেশে গত ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে অব্যাহত-ভাবে স্থানীয় জনসংখ্যা কমলেও শুধু অভিবাসন নীতি বা বিদেশীদের গ্রহণের মাধ্যমে জনসংখ্যার স্থিতিশীলতা ধরে রাখা হয়েছে। কোনও কোনও বছর সে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে। গোটা ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনেক চেষ্টা এবং পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেও নারীদের প্রয়োজনীয়-সংখ্যক সন্তান জন্মদানের বিষয়ে উৎসাহিত করতে পারছে না। এক দিকে বুলগেরিয়াসহ অনেক দেশ নিজ দেশে জন্মহার বাড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে, অপর দিকে বিদেশীদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়েও কঠোরতা আরোপ করে রেখেছে । ফলে দ্রুত কমছে বুলগেরিয়ার মতো প্রবাসীদের গ্রহণের ক্ষেত্রে কঠোর নীতি-গ্রহণকারী দেশের জনসংখ্যা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও হ্রাসের যে চিত্র তাতে দেখা যায়, এক দিকে বর্তমান বিশ্বে কিছু দেশ হিমশিম খাচ্ছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে। আরেক দিকে অনেক দেশ জোর চেষ্টা চালাচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য। কিন্তু অনেক দেশে জন্মহার বৃদ্ধির প্রায় সব চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। আর এখন বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের সরকার মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য। কারণ এসব দেশে অব্যাহত জনসংখ্যা হ্রাস ভয়াবহ রকমের একটি আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মানুষের অভাবে শিল্পের চাকা থেমে যাওয়া, অর্থনীতিতে ধস নামা, শিল্প, সেবা-খাতসহ অনেক কিছু বিদেশীদের হাতে চলে যাওয়া, দেশের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃশ্যপট বদলে যাওয়াসহ আরও অনেক সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিয়ে চিন্তিত তারা। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত যেসব দেশের জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি হ্রাস পাবে সেগুলো হলো বুলগেরিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, মলদোভা, রোমানিয়া, সার্বিয়া, ইউক্রেন, হাঙ্গেরি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন দ্বীপগুলো। দ্রুত জনসংখ্যা কমছে জাতিসঙ্ঘের এমন দেশের তালিকায় ১১তম স্থানে রয়েছে এশিয়ার জাপান। এরপরের দেশগুলো হলো জর্জিয়া, পর্তুগাল, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, এস্টোনিয়া, লেবানন, গ্রিস, দক্ষিণ কোরিয়া, আলবেনিয়া এবং বেলারুশ। জনবহুল যেসব দেশে সবচেয়ে নিন্ম জন্মহার সেগুলো হলো চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়া ফেডারেশন, জাপান এবং ভিয়েতনাম। নগরায়ণ, শিল্পায়ন, শিক্ষা, কর্মসংস্থানে নারীর অগ্রযাত্রা, নারীর ক্যারিয়ার, শিশু লালনপালন ও শিক্ষার ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি, কাজের সন্ধানে দেশ ত্যাগ, ভোগবাদীতা, জীবনযাত্রা ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতর হওয়ায় উন্নত দেশের অনেক নারী সন্তান ধারণ এমনকি বিয়েতে পর্যন্ত আগ্রহ হারিয়েছে অনেক আগে। এসব কারণে বিভিন্ন দেশে দ্রুত কমছে জনসংখ্যা। জাতিসঙ্ঘের ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে কত বছর পর কোন দেশের জনসংখ্যা কত হবে তা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ২০১৭ সালে বুলগেরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ৭০ লাখ ৮৫ হাজার। ২০৫০ সালে তা ৫৪ লাখে এবং এই শতাব্দী শেষে তা ৩৮ লাখে নেমে আসবে । বিবি-সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮৯ সালে বুলগেরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ৯০ লাখ। ২০১৭ সাল পর্যন্ত লাটভিয়ার জনসংখ্যা ১৯ লাখ ৫০ হাজার। ২০৫০ সাল নাগাদ তা ১৫ লাখ এবং এ শতাব্দী শেষে তা ১১ লাখে নেমে আসবে। লিথুনিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ। এ শতাব্দী শেষে এটা ১৯ লাখে নেমে আসবে। পোল্যান্ডের জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় চার কোটি। এ শতাব্দী শেষে তা ২ কোটিতে নেমে আসবে। রোমানিয়ার জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২ কোটি। বর্তমান শতাব্দী শেষে তা নেমে আসবে ১ কোটি ২০ লাখে। সার্বিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৮৮ লাখ। চলমান শতাব্দী শেষে তা ৫৪ লাখে নেমে আসবে। জাপানের জনসংখ্যা ১২ কোটি ৭৪ লাখ। ২০৫০ সালে ১০ কোটি ৮৭ লাখে নেমে আসবে। অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৬০ সালের মধ্যে জাপানের জনসংখ্যা ৮ কোটি ৭৪ লাখে নেমে আসবে। দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা ৫ কোটি থেকে নেমে শতাব্দী শেষে ৩ কোটি ৮৭ লাখে নেমে আসবে। রাশিয়ার জনসংখ্যা বর্তমানে ১৪ কোটি ৩০ লাখ থেকে ২০৫০ সালে ১১ কোটি ১০ লাখে নেমে আসবে। গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে গত বছর বলা হয়, পর্তুগালের জনসংখ্যা দেড় কোটি থেকে ২০৬০ সালে ৬৩ লাখে নেমে আসবে। অর্গানাইজেশন অব ইকোনমিক কর্পোরেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইডিসি) এর চলতি বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি একজন নারীর গড়ে ১ দশমিক ২ জন সন্তান রয়েছে, যা বিশ্বে সর্বনিন্ম। সিঙ্গাপুরের মন্ত্রী জোসেফ টিও চলতি বছর মার্চে ঘোষণা করেছেন সে দেশে একজন নারীর গড়ে ১ দশমিক ১৬ জন করে সন্তান রয়েছে। এটি বিশ্বে সবচেয়ে কম জন্মহার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ১০ বছর আগে একজন মার্কিনী নারীর গড়ে ২ দশমিক একজন করে সন্তান থাকত। এখন তা ১ দশমিক ৭৭ জন। গত বছর একে ঐতিহাসিক পতন হিসেবে উল্লেখ করেছে বোস্টন গ্লোব পত্রিকা। (দৈনিক নয়া দিগন্ত-১৪-০৯-২০১৮)
অশ্লীলতাকে আমরা তিনটি স্তরে রাখতে পারি ১.ব্যভিচার ২.ধর্ষণ ২.সমকামিতা। এসকল কলুষতা থেকে সমাজকে মুক্ত রাখার জন্য ইসলাম বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অশ্লীলতা রোধে ইসলাম পর্দার বিধান দিয়েছে, শালীন পোশাক পরিধানের কথা বলেছে এবং নারী ও পুরুষকে চক্ষু অবনত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি পার্থিব ও অপার্থিব শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে। নিন্মে অশ্লীলতা থেকে বেচে থাকার কতিপয় উপায় তুলে ধরা হল।
জেনা ব্যভিচারের উপকরণ থেকে দূরে থাকা ঃ
জেনা ব্যভিচার থেকে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে পবিত্র রাখার জন্য ইসলাম এগুলোর সব উপকরণ নিষিদ্ধ করেছে। যে সকল পথ দিয়ে জেনা ব্যভিচার প্রবেশ করতে পারে সে সকল পথের কাছে যেতেও মহা-গ্রন্থ আল-কুরআন কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। ইরশাদ হয়েছে-
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
“আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (সূরা ইসরা :৩২) এ আয়াতে করীমার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা একটি মৌলিক কথা বলেছেন যে, জেনা ব্যভিচার থেকে দূরে থাকা। এখন জেনা ব্যভিচার যদি অবৈধ প্রেমের মাধ্যমে বা পরকীয়ার মাধ্যমে বা প্রযুক্তির মাধ্যমে বা মোবাইলের মাধ্যমে বা ফ্রি মিক্সিংয়ের মাধ্যমে বা নাটক, সিনেমা,অশ্লীল দৃশ্য দেখার মাধ্যমে বা বিজ্ঞাপন, প্রচার পত্র, বিলবোর্ডের মাধ্যমে বা অপসংস্কৃতির মাধ্যমে বা অন্য যে কোন উপায়ের মাধ্যমে হোক না কেন তার থেকে দূরে থাকতে হবে।
পর্দা ও শালীন পোশাক পরিধান করা ঃ
জেনা ব্যভিচার ও ধর্ষণ বিস্তারের অন্যতম একটি কারণ হলো নারীর খোলামেলা পোশাক ও বেপর্দা চলাফেরা এজন্য ইসলাম পর্দার বিধান দিয়েছে। নারীদের উত্ত্যক্ত বা ইভ-টিজের শিকার হওয়া থেকে বাচার জন্য শালীন পোশাক বা পর্দা রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। মহা-গ্রন্থ আল-কুরআনের বাণী-
يٰٓأَيُّهَا النَّبِىُّ قُل لِّأَزْوٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلٰبِيبِهِنَّ ۚ ذٰلِكَ أَدْنٰىٓ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, আপনার কন্যাদেরকে আর মুমিনদের নারীদেরকে বলে দিন তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয় (যখন তারা বাড়ীর বাইরে যায়), এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে এবং তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহ-যাব-৫৯)
দৃষ্টি হেফাজত করা ঃ
চোখ হচ্ছে মনের জানালা। চোখ দিয়ে দেখে, মন দিয়ে কল্পনা করে, আর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে বাস্তবায়ন করে। জেনা ব্যভিচারের যত উৎস আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চোখ । এজন্য ইসলাম চোখের লাগাম টেনে ধরার নির্দেশ দিয়েছে। যাতে চোখের দৃষ্টি হারাম স্থানে পতিত না হয়। আল্লাহ তা‘আলার বানী-
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصٰرِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذٰلِكَ أَزْكٰى لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا يَصْنَعُونَ
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।” (সূরা নূর-৩০)
وَقُل لِّلْمُؤْمِنٰتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصٰرِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ
“ইমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে।”(সূরা নূর-৩১)
রসূল সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৃষ্টি হেফাজতের ব্যাপারে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন-
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا أَدْرَكَ ذَلِكَ لاَ مَحَالَةَ فَزِنَا الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ وَزِنَا اللِّسَانِ الْمَنْطِقُ وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ وَيُكَذِّبُهُ ‏”‏
আবু হুরায়রা (রা:) হতে নবী সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেছেন ‘মহান আল্লাহ প্রতিটি আদম সন্তানের মধ্যে জেনার একটি অংশ নির্ধারণ করে রেখেছেন, যা সে অবশ্যই করবে। সুতরাং দৃষ্টি হচ্ছে চোখের জেনা, প্রেমালাপ হচ্ছে জিহ্বার জেনা এবং অন্তরের জেনা হচ্ছে তা ভোগ করার আকাঙ্ক্ষা, আর গুপ্ত-স্থান তা সত্য কিংবা মিথ্যায় পরিণত করে।’ (আবু দাউদ-২১৫২)
হযরত উবা-দাহ রা. থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তোমরা আমাকে ছয়টি জিনিসের নিশ্চয়তা দিলে আমি তোমাদের জান্নাতের নিশ্চয়তা দিব। (ক) যখন তোমরা কথা বলবে সত্য বলবে; (খ) ওয়াদা করলে তা পালন করবে; (গ) আমানত গ্রহণ করলে তা আদায় করবে; (ঘ) লজ্জা-স্থানের হিফাজত করবে; (ঙ) দৃষ্টি-অবনত রাখবে এবং (চ) হাতকে (অন্যায় কর্ম থেকে) সংযত রাখবে। (আস-সহীহাহ- ১৪৭০)
عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، رَفَعَهُ قَالَ ‏ “‏ يَا عَلِيُّ لاَ تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ شَرِيكٍ
হযরত বুরাইদাহ রা. থেকে বর্ণিত, রসূল সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে ‘আলী! বারবার (অননুমোদিত জিনিসের প্রতি) তাকাবে না। তোমার প্রথম দৃষ্টি জায়েজ ( ও ক্ষমা-যোগ্য) হলেও পরের দৃষ্টি (ক্ষমা-যোগ্য) নয়।’(সহীহ আবু দাউদ -১৮৬৫)।
হদ কায়েম করা ঃ
জেনা ব্যভিচার বন্ধে ইসলাম এসকল পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি পার্থিব ও অপার্থিব শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে যাতে সমাজ থেকে এসকল মহামারি একবারেই বিনাশ হয়। ব্যভিচারের পার্থিব শাস্তি। বিবাহিত নারী-পুরুষের জন্য রজম অর্থাৎ পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা আর অবিবাহিত নারী-পুরুষের জন্য ১০০ বেত্রাঘাত। মহান আল্লাহর বাণী-
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِى فَاجْلِدُوا كُلَّ وٰحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ ۖ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِى دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ ۖ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ
“(অবিবাহিত) ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর করার কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” (সূরা নূর-২)
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ خُذُوا عَنِّي خُذُوا عَنِّي قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلاً الْبِكْرُ بِالْبِكْرِ جَلْدُ مِائَةٍ وَنَفْىُ سَنَةٍ وَالثَّيِّبُ بِالثَّيِّبِ جَلْدُ مِائَةٍ وَالرَّجْمُ ‏”‏
উবা-দাহ ইবনে সামিত রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রসূল সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর, তোমরা আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মহিলাদের জন্য একটি পন্থা বের করেছেন। যদি কোন অবিবাহিত পুরুষ কোন কুমারী মেয়ের সাথে ব্যভিচার করে তবে একশ বেত্রাঘাত কর এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন দাও। আর যদি বিবাহিত ব্যক্তি কোন বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করে, তবে তাদেরকে প্রথমত একশ বেত্রাঘাত করবে, এরপর পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবে। (সহিহ মুসলিম-৪৩০৬)
قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ وَهُوَ جَالِسٌ عَلَى مِنْبَرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ قَدْ بَعَثَ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم بِالْحَقِّ وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ الْكِتَابَ فَكَانَ مِمَّا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آيَةُ الرَّجْمِ قَرَأْنَاهَا وَوَعَيْنَاهَا وَعَقَلْنَاهَا فَرَجَمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَرَجَمْنَا بَعْدَهُ فَأَخْشَى إِنْ طَالَ بِالنَّاسِ زَمَانٌ أَنْ يَقُولَ قَائِلٌ مَا نَجِدُ الرَّجْمَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَيَضِلُّوا بِتَرْكِ فَرِيضَةٍ أَنْزَلَهَا اللَّهُ وَإِنَّ الرَّجْمَ فِي كِتَابِ اللَّهِ حَقٌّ عَلَى مَنْ زَنَى إِذَا أَحْصَنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ إِذَا قَامَتِ الْبَيِّنَةُ أَوْ كَانَ الْحَبَلُ أَوْ الاِعْتِرَافُ
‏ উমর ইবনে খাত্তাব রা. রসূল সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিম্বারের উপর বসা অবস্থায় বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তাঁর উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ নাযিল-কৃত বিষয়ের মধ্যে (ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপের আয়াত) রয়েছে। তা আমরা পাঠ করেছি, স্মরণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। সুতরাং রসূল সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যভিচারের জন্য রজম করার হুকুম বাস্তবায়ন করেছেন। তাঁর পরবর্তী সময়ে আমরাও (ব্যভিচারের জন্য) রজমের হুকুম বাস্তবায়িত করেছি। আমি ভয় করছি যে, দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর কেউ এ কথা হয়তো বলবে যে, আমারা আল্লাহর কিতাবে (ব্যভিচারের শাস্তি) রজমের নির্দেশ পাই না। তখন আল্লাহ কর্তৃক নাযিল-কৃত এ ফরয কাজটি পরিত্যাগ করে তারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাবে বিবাহিত নর-নারীর ব্যভিচারের শাস্তি (পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা)-এর হুকুম সাব্যস্ত। যখন সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমাণিত হয়, কিংবা গর্ভবতী হয়, অথবা সে নিজে স্বীকার করে। (সহিহ মুসলিম-৪৩১০)
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، وَسَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ قَالَ أَتَى رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ فَنَادَاهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي زَنَيْتُ ‏.‏ فَأَعْرَضَ عَنْهُ فَتَنَحَّى تِلْقَاءَ وَجْهِهِ فَقَالَ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي زَنَيْتُ ‏.‏ فَأَعْرَضَ عَنْهُ حَتَّى ثَنَى ذَلِكَ عَلَيْهِ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ فَلَمَّا شَهِدَ عَلَى نَفْسِهِ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ دَعَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صلىالله عليه وسلم فَقَالَ ‏”‏ أَبِكَ جُنُونٌ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ لاَ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ فَهَلْ أَحْصَنْتَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ نَعَمْ ‏‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ اذْهَبُوا بِهِ فَارْجُمُوهُ
‏আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন মুসলিমদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি রসূল সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এলো। তখন তিনি মসজিদে বসে ছিলেন। সে তখন উচ্চৈঃস্বরে বলল, হে আল্লাহর রসূল সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি ব্যভিচার করেছি। তখন তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে লোকটি তাঁর চেহারার দিকে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল ! আমি ব্যভিচার করেছি। এবারও তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এভাবে সে চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করল। এরপর সে যখন চারবার নিজের উপর সাক্ষ্য দিল, তখন রসূল সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং বললেন, তোমার মধ্যে কি পাগলামি আছে ? সে বলল, না। তুমি কি বিবাহিত? সে বলল, হ্যাঁ। তখন রসূল সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাাম বললেন, তোমরা তাকে নিয়ে যাও এবং পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা কর। (সহিহ মুসলিম-৪৩১২)
عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ مَرْثَدٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ، بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ، قَالَ جَاءَ مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ وَيْحَكَ ارْجِعْ فَاسْتَغْفِرِ اللَّهَ وَتُبْ إِلَيْهِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَرَجَعَ غَيْرَ بَعِيدٍ ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ وَيْحَكَ ارْجِعْ فَاسْتَغْفِرِ اللَّهَ وَتُبْ إِلَيْهِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَرَجَعَ غَيْرَ بَعِيدٍ ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّى إِذَا كَانَتِ الرَّابِعَةُ قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فِيمَ أُطَهِّرُكَ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ مِنَ الزِّنَى ‏.‏ فَسَأَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَبِهِ جُنُونٌ ‏”‏ ‏.‏ فَأُخْبِرَ أَنَّهُ لَيْسَ بِمَجْنُونٍ ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ أَشَرِبَ خَمْرًا ‏”‏ ‏.‏ فَقَامَ رَجُلٌ فَاسْتَنْكَهَهُ فَلَمْ يَجِدْ مِنْهُ رِيحَ خَمْرٍ ‏.‏ قَالَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَزَنَيْتَ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ نَعَمْ ‏.‏ فَأَمَرَ بِهِ فَرُجِمَ فَكَانَ النَّاسُ فِيهِ فِرْقَتَيْنِ قَائِلٌ يَقُولُ لَقَدْ هَلَكَ لَقَدْ أَحَاطَتْ بِهِ خَطِيئَتُهُ وَقَائِلٌ يَقُولُ مَا تَوْبَةٌ أَفْضَلَ مِنْ تَوْبَةِ مَاعِزٍ أَنَّهُ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَوَضَعَ يَدَهُ فِي يَدِهِ ثُمَّ قَالَ اقْتُلْنِي بِالْحِجَارَةِ – قَالَ – فَلَبِثُوا بِذَلِكَ يَوْمَيْنِ أَوْ ثَلاَثَةً ثُمَّ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُمْ جُلُوسٌ فَسَلَّمَ ثُمَّ جَلَسَ فَقَالَ ‏”‏ اسْتَغْفِرُوا لِمَاعِزِ بْنِ مَالِكٍ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَقَالُوا غَفَرَ اللَّهُ لِمَاعِزِ بْنِ مَالِكٍ ‏.‏ – قَالَ – فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ قُسِمَتْ بَيْنَ أُمَّةٍ لَوَسِعَتْهُمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ ثُمَّ جَاءَتْهُ امْرَأَةٌ مِنْ غَامِدٍ مِنَ الأَزْدِ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ وَيْحَكِ ارْجِعِي فَاسْتَغْفِرِي اللَّهَ وَتُوبِي إِلَيْهِ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَتْ أَرَاكَ تُرِيدُ أَنْ تُرَدِّدَنِي كَمَا رَدَّدْتَ مَاعِزَ بْنَ مَالِكٍ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ وَمَا ذَاكِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ إِنَّهَا حُبْلَى مِنَ الزِّنَا ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ آنْتِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ نَعَمْ ‏.‏ فَقَالَ لَهَا ‏”‏ حَتَّى تَضَعِي مَا فِي بَطْنِكِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَكَفَلَهَا رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ حَتَّى وَضَعَتْ قَالَ فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ قَدْ وَضَعَتِ الْغَامِدِيَّةُ ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ إِذًا لاَ نَرْجُمَهَا وَنَدَعَ وَلَدَهَا صَغِيرًا لَيْسَ لَهُ مَنْ يُرْضِعُهُ ‏”‏ ‏.‏ فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ إِلَىَّ رَضَاعُهُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ ‏.‏ قَالَ فَرَجَمَهَا ‏.‏
মুহাম্মাদ ইবনে আলা হাম-দানী রহ. সুলাইমান ইবনে বুরাইদাহ রহ. তাঁর পিতার থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, মাইজ ইবনে মালিক নবী সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে পবিত্র করুন। তখন রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার দুর্ভাগ্য। তুমি প্রত্যাবর্তন কর এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাওবাহ কর। বর্ণনাকারী বলেন যে, লোকটি অল্প দূর চলে গিয়ে আবার ফিরে এলো। এরপর বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে পবিত্র করুন। বর্ণনাকারী বলেন যে, লোকটি অল্প দূর গিয়ে আবার ফিরে আসলো এবং বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে পবিত্র করুন। তখন রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার দুর্ভাগ্য। তুমি প্রত্যাবর্তন কর এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাওবাহ কর। তখন নবী সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্বের মতই কথা বললেন, যখন চতুর্থ-বার মাইজ একই কথা বলল, আমাকে পবিত্র করুন হে আল্লাহর রসূল! রসূল সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, কোন বিষয়ে আমি তোমাকে পবিত্র করবো ? তখন সে বলল, জিনার পাপ হতে। সুতরাং রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার (সঙ্গী-সাথীদের নিকট) জিজ্ঞেস করলেন, তার মধ্যে কি কোন পাগলামি আছে ? তখন তাঁকে জানানো হলো যে, সে পাগল নয়। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সে মদ্যপান করেছে কি? তখন এক ব্যক্তি দণ্ডায়মান হলো এবং তার মুখ শুঁকে দেখল, সে তার মুখ থেকে মদের গন্ধ পেল না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জিনা করেছ? প্রতি উত্তরে সে বলল, জী-হ্যাঁ। অতএব রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রতি (ব্যভিচারের শাস্তি প্রদানের) নির্দেশ দিলেন। এরপর তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হলো। সুতরাং এ ব্যাপারে জনগণ দুদলে বিভক্ত হয়ে গেল। একদল বলতে লাগল, নিশ্চয় সে (মাইজ) ধ্বংস হয়ে গেছে। নিশ্চয় তার পাপকার্য তাকে ঘিরে ফেলেছে। দ্বিতীয় দল বলতে লাগল, মাইজ এর তাওবার চেয়ে উত্তম (তাওবার অনুশোচনা) আর হয় না। সে প্রথমে নবী সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আগমন করলো এবং নিজের হাত তাঁর হাতের উপর রাখলো। এরপর বলল, আমাকে পাথর দ্বারা হত্যা করুন। বর্ণনাকারী বলেন যে, দু তিন দিন পর্যন্ত মানুষ কেবল এ কথাই বলাবলি করছিল। এরপর রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করলেন এবং দেখলেন যে, সাহাবিগণ বসে আছেন। তিনি প্রথমে সালাম দিলেন, এরপর বসলেন এবং বললেন, তোমরা মাইজ ইবনে মালিক-এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তখন তাঁরা বললেন, আল্লাহ ! মাইজ ইবনে মালিককে ক্ষমা করুন। এরপর রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে এমনভাবে তাওবাহ করেছে, যদি তা একটি উম্মতের লোকদের মাঝে বণ্টিত হয় তবে সকলের জন্যই তা যথেষ্ট হতো। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তাঁর নিকট আযদ গোত্রের গামিদ পরিবারের এক মহিলা আগমন করলো এবং বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে পবিত্র করুন। তখন তিনি বললেন, তোমার দুর্ভাগ্য তুমি ফিরে যাও এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাওবাহ কর। তখন মহিলা বলল, আপনি কি আমাকে সেভাবে ফিরিয়ে দিতে চান যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মাইজ ইবনে মালিককে? তখন তিনি বললেন, তোমার কি হয়েছে? মহিলা বলল, আমি ব্যভিচারের কারণে গর্ভবতী হয়েছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এমন কাজ করেছ? সে প্রতি উত্তরে বলল, জী-হ্যাঁ। তখন তিনি তাকে বললেন, তোমার গর্ভের সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা কর। বর্ণনাকারী বলেন যে, এক আনসারী ব্যক্তি তার গর্ভের সন্তান প্রসবকাল পর্যন্ত তার দায়িত্ব গ্রহণ করলো। বর্ণনাকারী বলেন, কিছুদিন পর ঐ ব্যক্তি নবী সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া এর নিকট এসে বলল, গামিদীয় মহিলা তো সন্তান প্রসব করেছেন। তখন তিনি বললেন, এমতাবস্থায় তার ছোট শিশু সন্তানকে রেখে আমি তাকে রজম করতে পারি না। কেননা তার শিশু সন্তানকে দুধ-পান করানোর মত কেউ নেই। তখন এক আনসারী লোক দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমি তার দুধ-পান করানোর দায়িত্ব নিলাম। তখন তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করার আদেশ করলেন। (সহিহ মুসলিম-৪৩২৩)
ধর্ষকের শাস্তি :
বল প্রয়োগে যে ব্যভিচার সংঘটিত হয় তাই ধর্ষণ। এক্ষেত্রে যে বল প্রয়োগ করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করবে তার শাস্তি-হবে। আর যে বল প্রয়োগের শিকার হবে তার কোনও শাস্তি হবে না। তবে ধর্ষকের শাস্তি প্রয়োগে একাধিক মত রয়েছে। যা তুলে ধরা হলো-
ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমা.এদের মত হলো- ধর্ষণের জন্য ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ধর্ষক অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত আর বিবাহিত হলে পাথর মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করা।
ইমাম মালেক রহ. এর মত- ধর্ষণের অপরাধে ব্যভিচারের শাস্তি প্রয়োগের পাশাপাশি মু-হারাবার শাস্তিও প্রয়োগ করতে হবে।
মু-হারাবা কি?
মুহারাবা হলো অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ছাড়াই ভীতি প্রদর্শন করে ডাকাতি করা কিংবা লুণ্ঠন করা। এক কথায় মুহারাবা হলো পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি, লুণ্ঠন, নিরাপত্তা বিঘ্নিত-করণ, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা ইত্যাদি। এ সব অপরাধের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ ঘোষণা করেন-
إِنَّمَا جَزٰٓؤُا الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَسْعَوْنَ فِى الْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوٓا أَوْ يُصَلَّبُوٓا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلٰفٍ أَوْ يُنفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ۚ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْىٌ فِى الدُّنْيَا ۖ وَلَهُمْ فِى الْءَاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্ত-পদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।” (সূরা মায়ে-দাহ-৩৩)
এ আয়াতের আলোকে বিচারক ধর্ষণকারীকে ব্যভিচারের শাস্তির সঙ্গে সঙ্গে উল্লেখিত ৪ ধরনের (১.তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ২. শূলীতে চড়ানো হবে অথবা ৩. তাদের হস্ত-পদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা ৪. দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে) যে কোনও শাস্তি প্রয়োগ করতে পারবে। কেননা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ধর্ষণ হলো আল্লাহ ও তার রসুলের নিয়ম-নীতি বিরুদ্ধ অপরাধ। আর তা তাদের সঙ্গে যুদ্ধে উপনীত হওয়ার শামিল। তাছাড়া ধর্ষণের ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করা হয়। ইসলামের বিধান লঙ্ঘনে বল প্রয়োগ করলেও এ শাস্তি প্রযোজ্য হবে। তাই সমাজে যখন ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করে তখন সমাজ থেকে ধর্ষণ সমূলে উৎপাটন করতে (মু-হারাবার) মতো ভয়াবহ শাস্তি প্রয়োগ করাও জরুরি। আর যদি ধর্ষণ এর কারণে হত্যা-জনিত অপরাধ সংঘটিত হয় কিংবা ধর্ষণের শিকার কোনও ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তবে ঘাতকের একমাত্র শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।
ইসলামের প্রথম যুগের জোরপূর্বক ব্যভিচার তথা ধর্ষণের কিছু বিচারের বর্ণনা-
عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ الْكِنْدِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ امْرَأَةً، خَرَجَتْ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تُرِيدُ الصَّلاَةَ فَتَلَقَّاهَا رَجُلٌ فَتَجَلَّلَهَا فَقَضَى حَاجَتَهُ مِنْهَا فَصَاحَتْ فَانْطَلَقَ وَمَرَّ عَلَيْهَا رَجُلٌ فَقَالَتْ إِنَّ ذَاكَ الرَّجُلَ فَعَلَ بِي كَذَا وَكَذَا ‏.‏ وَمَرَّتْ بِعِصَابَةٍ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ فَقَالَتْ إِنَّ ذَاكَ الرَّجُلَ فَعَلَ بِي كَذَا وَكَذَا ‏.‏ فَانْطَلَقُوا فَأَخَذُوا الرَّجُلَ الَّذِي ظَنَّتْ أَنَّهُ وَقَعَ عَلَيْهَا وَأَتَوْهَا فَقَالَتْ نَعَمْ هُوَ هَذَا ‏.‏ فَأَتَوْا بِهِ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا أَمَرَ بِهِ لِيُرْجَمَ قَامَ صَاحِبُهَا الَّذِي وَقَعَ عَلَيْهَا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا صَاحِبُهَا ‏.‏ فَقَالَ لَهَا ‏”‏ اذْهَبِي فَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكِ ‏”‏ ‏.‏ وَقَالَ لِلرَّجُلِ قَوْلاً حَسَنًا وَقَالَ لِلرَّجُلِ الَّذِي وَقَعَ عَلَيْهَا ‏”‏ ارْجُمُوهُ ‏”‏ ‏.‏ وَقَالَ ‏”‏ لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا أَهْلُ الْمَدِينَةِ لَقُبِلَ مِنْهُمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَعَلْقَمَةُ بْنُ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ سَمِعَ مِنْ أَبِيهِ وَهُوَ أَكْبَرُ مِنْ عَبْدِ الْجَبَّارِ بْنِ وَائِلٍ وَعَبْدُ الْجَبَّارِ بْنُ وَائِلٍ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ أَبِيهِ
আলকামা ইবনে ওয়াইল রহ. হতে তার বাবা থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জামানায় একজন মহিলা নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। রাস্তায় একজন লোক তার সামনে পড়ে এবং সে তাকে তার পোশাকে ঢেকে নিয়ে (জাপটে ধরে) নিজের প্রয়োজন মিটায় (ধর্ষণ করে)। মহিলাটি চিৎকার করলে লোকটি পালিয়ে গেল। তারপর আরেকজন লোক তার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি বলল ঐ লোকটি আমার সাথে এই এই করেছে। ইতিমধ্যে মুহাজির সাহাবীদের একটি দলও সে স্থান দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি বলল, ঐ লোকটি আমার সাথে এই এই করেছে। যে লোকটি তাকে ধর্ষণ করেছে বলে সে ধারণা করল, তারা (দৌড়ে) গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন। তাকে নিয়ে তারা মহিলাটির সামনে ফিরে আসলে সে বলল, হ্যাঁ, এই সেই লোক। তারা রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট তাকে নিয়ে আসেন। তিনি যখন তাকে রজমের (পাথর মেরে হত্যা) হুকুম দিলেন, সে সময় তার আসল ধর্ষণকারী উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি তার ধর্ষণকারী (ঐ লোকটি নয়)। তিনি মহিলাটিকে বললেন, যাও, তোমাকে আল্লাহ তা‘আলা মাফ করে দিয়েছেন। তিনি (সন্দেহজনকভাবে) ধৃত লোকটির সম্বন্ধে ভাল কথা বললেন। মহিলাটির আসল ধর্ষণকারীর সম্পর্কে তিনি হুকুম করলেন, একে রজম কর। তিনি আরও বললেন: সে এমন ধরণের তাওবা করেছে, যদি মদিনার সকল জনগণ এমন তাওবা করে তবে তাদের সেই তাওবা কবুল করা হবে। ( তিরমিযী-১৪৫৪, আবু দাউদ-৪৩৭৯)
(কুরআন-হাদিসে বহু অপরাধের ওপর শাস্তির বিধান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যেসব শাস্তির পরিমাণ ও পদ্ধতি কুরআন-হাদিসে সুনির্ধারিত তাকে হদ বলে।)
عَبْدِ الْجَبَّارِ بْنِ وَائِلٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ اسْتُكْرِهَتِ امْرَأَةٌ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَدَرَأَ عَنْهَا الْحَدَّ وَأَقَامَهُ عَلَى الَّذِي أَصَابَهَا ‏.‏ وَلَمْ يَذْكُرْ أَنَّهُ جَعَلَ لَهَا مَهْرًا ‏.‏
ওয়ায়িল বিন হুজর রা. থেকে বর্ণিত, ‘রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কোনরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষণকারীকে হদ্দের শাস্তি দেন। তিনি মহিলার জন্য মোহরের ব্যবস্থা করেছিলেন কিনা তা রাবি উল্লেখ করেননি।’ (তিরমিযি-১৪৫৩, ইবনে মাজাহ২৫৯৮)
হজরত নাফি রহ. বর্ণনা করেন, হজরত আবু বকর র. এর আমলে এক ব্যক্তি এক কুমারী মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। লোকজন ধর্ষণকারীকে হজরত আবু বকর রা.এর কাছে উপস্থিত করলে সে (ধর্ষক) ব্যভিচারের কথা অকপটে স্বীকার করে। লোকটি ছিল অবিবাহিত। তাই আবু বকর রা.এর নির্দেশ মোতাবেক লোকটিকে বেত্রাঘাত করা হলো। এরপর তাকে মদিনা থেকে ফাঁদাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। (মুয়াত্তা মালিক)
হজরত ওমর রা.এর শাসনামলে সরকারি মালিকানাধীন (কাজে নিযুক্ত) এক গোলাম এক দাসীর সঙ্গে জবরদস্তি করে ব্যভিচার (ধর্ষণ) করে। এতে ওই দাসীর কুমারিত্ব নষ্ট হয়ে যায়। হজরত ওমর রা. ওই গোলামকে কষাঘাত (বেত্রাঘাত) করেন এবং নির্বাসন দেন। কিন্তু দাসীকে কোনও শাস্তি প্রদান করেননি। (বুখারি)
ব্যভিচারীদের জন্য লাঞ্ছনা-দায়ক শাস্তি ঃ
পৃথিবীর সব অপরাধীকে সব সময় আইনের আওতায় আনা সম্ভব নয়। কিছু কিছু অপরাধীর শাস্তি দুনিয়ার বিচারে নাও হতে পারে। সেজন্য ইসলাম অপরাধীর জন্য অপার্থিব শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে। ধর্ষণ ও ব্যভিচার বন্ধের উপরোক্ত ফর্মুলা প্রয়োগের পরও কোন ব্যক্তি এ জঘন্য কাজের প্রতি অগ্রসর হলে পরকালিন লাঞ্ছনা-দায়ক শাস্তির কথা বিবেচনা করে এ কাজ থেকে বিরত থাকবে। মহান আল্লাহর বাণী-
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا
“এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। (সুরা ফুরকান ৬৮,৬৯ )
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفٰحِشَةُ فِى الَّذِينَ ءَامَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِى الدُّنْيَا وَالْءَاخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“যারা পছন্দ করে যে, ইমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।” (সূরা নূর-১৯)
ব্যভিচারীরা চরম সীমালংঘনকারী ঃ
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حٰفِظُونَ إِلَّا عَلٰىٓ أَزْوٰجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمٰنُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
“এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে।” (সূরা মু‘মিনূন-৫-৮)
ব্যভিচারের সময় ইমান থাকে না ঃ
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْني وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلا يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلا يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ
আবু হুরায়রাহ রা. বলেন যে, রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি ঈমান থাকা অবস্থায় জেনা করতে পারে না এবং কোন ব্যক্তি ঈমান থাকা অবস্থায় মদ্যপান করতে পারে না। আর কোন ব্যক্তি ঈমান থাকা অবস্থায় চুরি করতে পারে না। (বুখারী – ৫৫৭৮, মুসলিম- ৫৭)
রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যভিচার না করার বাই‘য়াত নিতেন ঃ

وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَحَوْلَه عِصَابَةٌ مِنْ أَصْحَابِه : بَايِعُونِي عَلى أَنْ لَا تُشْرِكُوا بِاللهِ شَيْئًا وَلَا تَسْرِقُوا وَلَا تَزْنُوا وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ وَلَا تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَه بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ وَلَا تَعْصُوْا فِي مَعْرُوفٍ فَمَنْ وَفى مِنْكُمْ فَأَجْرُه عَلَى اللهِ وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ فِي الدُّنْيَا فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَه وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذلِكَ شَيْئًا ثُمَّ سَتَرَهُ اللّهُ فَهُوَ إِلَى اللهِ إِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ وَإِنْ شَاءَ عَاقَبَه فَبَايَعْنَاهُ عَلى ذلِك. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
উবা-দাহ ইবনে সামিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঘিরে একদল সহাবী বসেছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমার হাতে এ কথার বাই‘আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার (জিনা) করবে না, নিজেদের সন্তানাদি (অভাবের দরুন) হত্যা করবে না। কারো প্রতি (জিনার) মিথ্যা অপবাদ দিবে না। শারী‘আতসম্মত কোন বিষয়ে অবাধ্য হবে না। তোমাদের মধ্যে যারা এ সকল অঙ্গীকার পূর্ণ করতে পারবে, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে পুরষ্কার রয়েছে। অপরদিকে যে লোক (শিরক ব্যতীত) অন্য কোন অপরাধ করবে এবং এজন্যে দুনিয়ায় শাস্তি পেয়ে যাবে তাহলে এ শাস্তি তার গুনাহ মাফ হবার কাফফারা হয়ে যাবে। আর যদি কোন গুনাহের কাজ করে, অথচ আল্লাহ তা ঢেকে রাখেন (বা ধরা না পড়ে), এজন্যে দুনিয়ায় এর কোন বিচার না হয়ে থাকে, তাহলে এ কাজ আল্লাহর মর্যির উপর নির্ভর করবে। তিনি ইচ্ছা করলে আখিরাতে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন অথবা শাস্তিও দিতে পারেন। বর্ণনাকারী (উবা-দাহ) বলেন, আমরা এ সকল শর্তানুযায়ী রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতে বাই‘আত করলাম। ( সহীহ: বুখারী ৬৭৭২, মুসলিম ১৭০৯, নাসায়ী ৪১৬১, আহমাদ ২২৭৩৩, দারিমী ২৪৯৭, সহীহাহ ২৯৯৯, সহীহ আল জামি ২৯৫৫; শব্দ বুখারীর।)
ব্যভিচারীদেরকে আগুন ভর্তি চুলায় জালানো হবে ঃ
حَدَّثَنَا سَمُرَةُ بْنُ جُنْدُبٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِمَّا يُكْثِرُ أَنْ يَقُولَ لِأَصْحَابِهِ هَلْ رَأَى أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ رُؤْيَا قَالَ فَيَقُصُّ عَلَيْهِ مَنْ شَاءَ اللهُ أَنْ يَقُصَّ وَإِنَّهُ قَالَ ذَاتَ غَدَاةٍ إِنَّهُ أَتَانِي اللَّيْلَةَ آتِيَانِ وَإِنَّهُمَا ابْتَعَثَانِي وَإِنَّهُمَا قَالاَ لِي انْطَلِقْ وَإِنِّي انْطَلَقْتُ مَعَهُمَا وَإِنَّا أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجعٍ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِصَخْرَةٍ وَإِذَا هُوَ يَهْوِي بِالصَّخْرَةِ لِرَأْسِهِ فَيَثْلَغُ رَأْسَهُ فَيَتَهَدْهَدُ الْحَجَرُ هَا هُنَا فَيَتْبَعُ الْحَجَرَ فَيَأْخُذُهُ فَلاَ يَرْجِعُ إِلَيْهِ حَتَّى يَصِحَّ رَأْسُهُ كَمَا كَانَ ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الْأُولَى قَالَ قُلْتُ لَهُمَا سُبْحَانَ اللهِ مَا هَذَانِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُسْتَلْقٍ لِقَفَاهُ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِكَلُّوبٍ مِنْ حَدِيدٍ وَإِذَا هُوَ يَأْتِي أَحَدَ شِقَّيْ وَجْهِهِ فَيُشَرْشِرُ شِدْقَهُ إِلَى قَفَاهُ وَمَنْخِرَهُ إِلَى قَفَاهُ وَعَيْنَهُ إِلَى قَفَاهُ قَالَ وَرُبَّمَا قَالَ أَبُو رَجَاءٍ فَيَشُقُّ قَالَ ثُمَّ يَتَحَوَّلُ إِلَى الْجَانِبِ الْآخَرِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ بِالْجَانِبِ الأَوَّلِ فَمَا يَفْرُغُ مِنْ ذَلِكَ الْجَانِبِ حَتَّى يَصِحَّ ذَلِكَ الْجَانِبُ كَمَا كَانَ ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الْأُولَى قَالَ قُلْتُ سُبْحَانَ اللهِ مَا هَذَانِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى مِثْلِ التَّنُّورِ قَالَ فَأَحْسِبُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ وَأَصْوَاتٌ قَالَ فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ وَإِذَا هُمْ يَأْتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ اللهَبُ ضَوْضَوْا قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَؤُلاَءِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى نَهَرٍ حَسِبْتُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ أَحْمَرَ مِثْلِ الدَّمِ وَإِذَا فِي النَّهَرِ رَجُلٌ سَابِحٌ يَسْبَحُ وَإِذَا عَلَى شَطِّ النَّهَرِ رَجُلٌ قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ حِجَارَةً كَثِيرَةً وَإِذَا ذَلِكَ السَّابِحُ يَسْبَحُ مَا يَسْبَحُ ثُمَّ يَأْتِي ذَلِكَ الَّذِي قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ الْحِجَارَةَ فَيَفْغَرُ لَهُ فَاهُ فَيُلْقِمُهُ حَجَرًا فَيَنْطَلِقُ يَسْبَحُ ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَيْهِ كُلَّمَا رَجَعَ إِلَيْهِ فَغَرَ لَهُ فَاهُ فَأَلْقَمَهُ حَجَرًا قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَذَانِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ كَرِيهِ الْمَرْآةِ كَأَكْرَهِ مَا أَنْتَ رَاءٍ رَجُلاً مَرْآةً وَإِذَا عِنْدَهُ نَارٌ يَحُشُّهَا وَيَسْعَى حَوْلَهَا قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَذَا قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى رَوْضَةٍ مُعْتَمَّةٍ فِيهَا مِنْ كُلِّ لَوْنِ الرَّبِيعِ وَإِذَا بَيْنَ ظَهْرَيْ الرَّوْضَةِ رَجُلٌ طَوِيلٌ لاَ أَكَادُ أَرَى رَأْسَهُ طُولاً فِي السَّمَاءِ وَإِذَا حَوْلَ الرَّجُلِ مِنْ أَكْثَرِ وِلْدَانٍ رَأَيْتُهُمْ قَطُّ قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَذَا مَا هَؤُلاَءِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَانْتَهَيْنَا إِلَى رَوْضَةٍ عَظِيمَةٍ لَمْ أَرَ رَوْضَةً قَطُّ أَعْظَمَ مِنْهَا وَلاَ أَحْسَنَ قَالَ قَالاَ لِي ارْقَ فِيهَا قَالَ فَارْتَقَيْنَا فِيهَا فَانْتَهَيْنَا إِلَى مَدِينَةٍ مَبْنِيَّةٍ بِلَبِنِ ذَهَبٍ وَلَبِنِ فِضَّةٍ فَأَتَيْنَا بَابَ الْمَدِينَةِ فَاسْتَفْتَحْنَا فَفُتِحَ لَنَا فَدَخَلْنَاهَا فَتَلَقَّانَا فِيهَا رِجَالٌ شَطْرٌ مِنْ خَلْقِهِمْ كَأَحْسَنِ مَا أَنْتَ رَاءٍ وَشَطْرٌ كَأَقْبَحِ مَا أَنْتَ رَاءٍ قَالَ قَالاَ لَهُمْ اذْهَبُوا فَقَعُوا فِي ذَلِكَ النَّهَرِ قَالَ وَإِذَا نَهَرٌ مُعْتَرِضٌ يَجْرِي كَأَنَّ مَاءَهُ الْمَحْضُ فِي الْبَيَاضِ فَذَهَبُوا فَوَقَعُوا فِيهِ ثُمَّ رَجَعُوا إِلَيْنَا قَدْ ذَهَبَ ذَلِكَ السُّوءُ عَنْهُمْ فَصَارُوا فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ قَالَ قَالاَ لِي هَذِهِ جَنَّةُ عَدْنٍ وَهَذَاكَ مَنْزِلُكَ قَالَ فَسَمَا بَصَرِي صُعُدًا فَإِذَا قَصْرٌ مِثْلُ الرَّبَابَةِ الْبَيْضَاءِ قَالَ قَالاَ لِي هَذَاكَ مَنْزِلُكَ قَالَ قُلْتُ لَهُمَا بَارَكَ اللهُ فِيكُمَا ذَرَانِي فَأَدْخُلَهُ قَالاَ أَمَّا الْآنَ فَلاَ وَأَنْتَ دَاخِلَهُ قَالَ قُلْتُ لَهُمَا فَإِنِّي قَدْ رَأَيْتُ مُنْذُ اللَّيْلَةِ عَجَبًا فَمَا هَذَا الَّذِي رَأَيْتُ قَالَ قَالاَ لِي أَمَا إِنَّا سَنُخْبِرُكَ أَمَّا الرَّجُلُ الأَوَّلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُثْلَغُ رَأْسُهُ بِالْحَجَرِ فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَأْخُذُ الْقُرْآنَ فَيَرْفُضُهُ وَيَنَامُ عَنْ الصَّلاَةِ الْمَكْتُوبَةِ وَأَمَّا الرَّجُلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُشَرْشَرُ شِدْقُهُ إِلَى قَفَاهُ وَمَنْخِرُهُ إِلَى قَفَاهُ وَعَيْنُهُ إِلَى قَفَاهُ فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَغْدُو مِنْ بَيْتِهِ فَيَكْذِبُ الْكَذْبَةَ تَبْلُغُ الْآفَاقَ وَأَمَّا الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ الْعُرَاةُ الَّذِينَ فِي مِثْلِ بِنَاءِ
التَّنُّورِ فَإِنَّهُمْ الزُّنَاةُ وَالزَّوَانِي وَأَمَّا الرَّجُلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يَسْبَحُ فِي النَّهَرِ وَيُلْقَمُ الْحَجَرَ فَإِنَّهُ آكِلُ الرِّبَا وَأَمَّا الرَّجُلُ الْكَرِيهُ الْمَرْآةِ الَّذِي عِنْدَ النَّارِ يَحُشُّهَا وَيَسْعَى حَوْلَهَا فَإِنَّهُ مَالِكٌ خَازِنُ جَهَنَّمَ وَأَمَّا الرَّجُلُ الطَّوِيلُ الَّذِي فِي الرَّوْضَةِ فَإِنَّهُ إِبْرَاهِيمُ صلى الله عليه وسلم وَأَمَّا الْوِلْدَانُ الَّذِينَ حَوْلَهُ فَكُلُّ مَوْلُودٍ مَاتَ عَلَى الْفِطْرَةِ قَالَ فَقَالَ بَعْضُ الْمُسْلِمِينَ يَا رَسُولَ اللهِ وَأَوْلاَدُ الْمُشْرِكِينَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَوْلاَدُ الْمُشْرِكِينَ وَأَمَّا الْقَوْمُ الَّذِينَ كَانُوا شَطْرٌ مِنْهُمْ حَسَنًا وَشَطْرٌ قَبِيحًا فَإِنَّهُمْ قَوْمٌ خَلَطُوا عَمَلاً صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا تَجَاوَزَ اللهُ عَنْهُمْ.

সামুরাহ ইবনে জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই তাঁর সহাবীদেরকে বলতেন, তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি ? রাবি বলেন, যাদের ক্ষেত্রে আল্লাহর ইচ্ছা, তারা রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করতেন। তিনি একদিন সকালে আমাদেরকে বললেন, গত রাতে আমার কাছে দুজন আগন্তুক আসল। তারা আমাকে উঠাল। আর আমাকে বলল, চলুন। আমি তাদের সঙ্গে চললাম। আমরা কাত হয়ে শুয়ে থাকা এক লোকের কাছে আসলাম। দেখলাম, অন্য এক লোক তার নিকট পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে তার মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে। ফলে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। আর পাথর নিচে গিয়ে পড়ছে। এরপর আবার সে পাথরটি অনুসরণ করে তা আবার নিয়ে আসছে। ফিরে আসতে না আসতেই লোকটির মাথা আগের মত আবার ভাল হয়ে যায়। ফিরে এসে আবার তেমনি আচরণ করে, যা পূর্বে প্রথমবার করেছিল। তিনি বলেন, আমি তাদের (সাথী-দ্বয়কে) বললাম, সুবহানাল্লাহ ! এরা কারা? তিনি বললেন, তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম, এরপর আমরা চিৎ হয়ে শোয়া এক লোকের কাছে আসলাম। এখানেও দেখলাম, তার নিকট এক লোক লোহার আঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর সে তার চেহারার একদিকে এসে এটা দ্বারা মুখমণ্ডলের একদিক মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে নাসারন্ধ্র, চোখ ও মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে। এরপর ঐ লোকটি শায়িত লোকটির অপরদিকে যায় এবং প্রথম দিকের সঙ্গে যেমন আচরণ করেছে তেমনি আচরণই অপরদিকের সঙ্গেও করে। ঐ দিক হতে অবসর হতে না হতেই প্রথম দিকটি আগের মত ভাল হয়ে যায়। তারপর আবার প্রথমবারের মত আচরণ করে। তিনি বলেন, আমি বললাম, সুবহানআল্লাহ ! এরা কারা? তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। রাবি বলেন, আমার মনে হয় যেন তিনি বলেছিলেন, আর তথায় শোরগোলের শব্দ ছিল। তিনি বলেন, আমরা তাতে উঁকি মারলাম, দেখলাম তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী ও পুরুষ রয়েছে। আর নিচ থেকে বের হওয়া আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে ¯পর্শ করে, তখনই তারা উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম এবং একটা নদীর (তীরে) গিয়ে পৌঁছলাম। রাবি বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে তিনি বলেছিলেন, নদীটি ছিল রক্তের মত লাল। আর দেখলাম, এই নদীতে এক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। আর নদীর তীরে অন্য এক লোক আছে এবং সে তার কাছে অনেকগুলো পাথর একত্রিত করে রেখেছে। আর ঐ সাঁতারকারী লোকটি বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর সে লোক কাছে এসে পৌঁছে যে নিজের নিকট পাথর একত্রিত করে রেখেছে। সেখানে এসে সে তার মুখ খুলে দেয় আর ঐ লোক তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সে চলে যায়, সাঁতার কাটতে থাকে; আবার তার কাছে ফিরে আসে, যখনই সে তার কাছে ফিরে আসে তখনই সে তার মুখ খুলে দেয়, আর ঐ ব্যক্তি তার মুখে একটা পাথর ঢুকিয়ে দেয়। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তার বলল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম এবং এমন একজন কুশ্রী লোকের কাছে এসে পৌঁছলাম, যে তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কুশ্রী বলে মনে হয়। আর দেখলাম, তার নিকট রয়েছে আগুন, যা সে জ্বালাচ্ছে ও তার চতুর্দিকে দৌড়াচ্ছে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, ঐ লোকটি কে? তারা বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং একটা সজীব শ্যামল বাগানে হাজির হলাম, যেখানে বসন্তের হরেক রকম ফুলের কলি রয়েছে। আর বাগানের মাঝে আসমানের থেকে অধিক উঁচু দীর্ঘকায় একজন পুরুষ রয়েছে যার মাথা যেন আমি দেখতেই পাচ্ছি না। এমনিভাবে তার চারপাশে এত বিপুল সংখ্যক বালক-বালিকা দেখলাম যে, এত অধিক আর কখনো আমি দেখিনি। আমি তাদেরকে বললাম, উনি কে? এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং একটা বিরাট বাগানে গিয়ে পৌঁছলাম। এমন বড় এবং সুন্দর বাগান আমি আর কখনো দেখিনি। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এর ওপরে চড়ুন। আমরা ওপরে চড়লাম। শেষ পর্যন্ত সোনা-রূপার ইটের তৈরি একটি শহরে গিয়ে আমরা হাজির হলাম। আমরা শহরের দরজায় পৌঁছলাম এবং দরজা খুলতে বললাম। আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হল, আমরা তাতে প্রবেশ করলাম। তখন সেখানে আমাদের সঙ্গে এমন কিছু লোক সাক্ষাৎ করল যাদের শরীরের অর্ধেক খুবই সুন্দর, যা তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে সুন্দর মনে হয়। আর শরীরের অর্ধেক এমনই কুশ্রী ছিল যা তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কুশ্রী মনে হয়। তিনি বলেন, সাথী-দ্বয় ওদেরকে বলল, যাও ঐ নদীতে গিয়ে নেমে পড়। আর সেটা ছিল প্রশস্ত প্রবাহিত নদী, যার পানি ছিল দুধের মত সাদা। ওরা তাতে গিয়ে নেমে পড়ল। অতঃপর এরা আমাদের কাছে ফিরে এলো, দেখা গেল তাদের এ শ্রীহীনতা দূর হয়ে গেছে এবং তারা খুবই সুন্দর আকৃতির হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এটা জান্নাতে আদন এবং এটা আপনার বাসস্থান। তিনি বলেন, আমি বেশ উপরের দিকে তাকালাম, দেখলাম ধবধবে সাদা মেঘের মত একটি প্রাসাদ আছে। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এটা আপনার বাসগৃহ। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, আল্লাহ তোমাদের মাঝে বরকত দিন! আমাকে ছেড়ে দাও। আমি এতে প্রবেশ করি। তারা বলল, আপনি অবশ্য এতে প্রবেশ করবেন। তবে এখন নয়। তিনি বলেন, আমি এ রাতে অনেক বিস্ময়কর বিষয় দেখতে পেলাম, এগুলোর তাৎপর্য কি? তারা আমাকে বলল, আচ্ছা! আমরা আপনাকে বলে দিচ্ছি। ঐ যে প্রথম ব্যক্তিকে যার কাছে আপনি পৌঁছেছিলেন, যার মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে হল ঐ ব্যক্তি যে কুরআন গ্রহণ করে তা ছেড়ে দিয়েছে। আর ফরয সলাত ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকে। আর ঐ ব্যক্তি যার কাছে গিয়ে দেখেছেন যে, তার মুখের এক ভাগ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত, এমনিভাবে নাসারন্ধ্র ও চোখ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা হচ্ছিল সে হল ঐ ব্যক্তি, যে সকালে নিজ ঘর থেকে বের হয়ে এমন মিথ্যা বলে যা চারদিকে ছড়িয়ে পরে। আর এ সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা চুলা সদৃশ গর্তের ভিতর আছে তারা হল ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর দল। আর ঐ ব্যক্তি, যার কাছে পৌঁছে দেখেছিলেন যে, সে নদীতে সাঁতার কাটছে ও তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে সে হল সুদখোর। আর ঐ কুশ্রী ব্যক্তি, যে আগুনের কাছে ছিল এবং আগুন জ্বালাচ্ছিল আর সে এর চারপাশে দৌড়চ্ছিল, সে হল জাহান্নামের দারোগা, মালিক ফেরেশতা। আর এ দীর্ঘকায় ব্যক্তি যিনি বাগানে ছিলেন, তিনি হলেন, ইবরাহীম (আঃ)। আর তাঁর আশেপাশের বালক-বালিকারা হলো ঐসব শিশু, যারা ফিতরাতের (স্বভাব-ধর্মের) ওপর মৃত্যুবরণ করেছে। তিনি বলেন, তখন কিছু সংখ্যক মুসলিম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও কি? তখন রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও। আর ঐসব লোক যাদের অর্ধাংশ অতি সুন্দর ও অর্ধাংশ অতি কুশ্রী তারা হল ঐ সম্প্রদায় যারা সৎ-অসৎ উভয় কাজ মিশ্রিত-ভাবে করেছে। আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (বুখারী-১৩৪৭)
عَنْ قَتَادَةَ أَخْبَرَنَا أَنَسٌ قَالَ لأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا لاَ يُحَدِّثُكُمُوهُ أَحَدٌ بَعْدِي سَمِعْتُهُ مِنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ وَإِمَّا قَالَ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ وَيَظْهَرَ الزِّنَا وَيَقِلَّ الرِّجَالُ وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ حَتَّى يَكُونَ لِلْخَمْسِينَ امْرَأَةً الْقَيِّمُ الْوَاحِدُ.
ক্বাতাদাহ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদেরকে আনাস রা. বলেছেন যে, আমি তোমাদেরকে এমন এক হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পরে তোমাদেরকে কেউ বর্ণনা করবে না। আমি রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে না অথবা তিনি বলেছেন, কিয়ামতের আগের নিদর্শনগুলোর মধ্যে হল এই যে, ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে, মূর্খতার বিস্তার ঘটবে, মদ পান করা হবে, ব্যাপকভাবে জিনা হবে, পুরুষের সংখ্যা কমবে, নারীর সংখ্যা এমনভাবে বৃদ্ধি পাবে যে, পঞ্চাশ জন নারীর কর্তৃত্বে থাকবে একজন পুরুষ। (বুখারী-৬৮০৮)
ব্যভিচার সবচেয়ে বড় পাপের অন্তর্ভুক্ত ঃ
عنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ قَالَ أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ قُلْتُ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ مِنْ أَجْلِ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ قُلْتُ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ أَنْ تُزَانِيَ حَلِيلَةَ جَارِكَ
আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কোন পাপটি সব থেকে বড়? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর কোন সমকক্ষ স্থির করবে। অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, তোমার সঙ্গে আহার করবে এ ভয়ে তোমার সন্তানকে হত্যা করা। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে জিনা করা। (বুখারী-৬৮১১)
ব্যভিচারীদের সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না ঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: الشَّيْخُ الزَّانِي، وَالْعَائِلُ الْمَزْهُوُّ، وَالْإِمَامُ الْكَذَّابُ ”
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,‘রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে মহান মহীয়ান আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। বৃদ্ধ ব্যভিচারী, অহংকারী ফকীর এবং মিথ্যাবাদী নেতা। (নাসাঈ-২৫৭৫)
রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে-
ক. তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে খ. তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং গ. তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।
আর যে তিনটি শাস্তি আখেরতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে- ক. সে আল্লাহর অসন্তোষে পতিত হবে খ. তার হিসাব কঠিন হবে ও গ. জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (বায়হাকি-৫৬৪)
জেনা ব্যভিচারের অপবিত্রতা থেকে নিজেকে পবিত্র রাখার প্রতিদান ঃ
ইসলাম একদিকে যেমন জেনা ব্যভিচারে লিপ্ত ব্যক্তির শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে ঠিক একইভাবে এর থেকে যারা নিজেদেরকে পবিত্র রাখতে পারবে তাদের জন্য অফুরন্ত প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছে। এ প্রতিদান সে দুনিয়াতে ও পাবে আখেরতে ও পাবে। যে ব্যক্তি অশ্লীলতা থেকে নিজেকে দূরে রাখবে আল্লাহ তা‘আলা তার পারিবারিক জীবন সুখময় করবেন, চেহারায় নূর দান করবেন, হায়াতে ও রিজিকে বারাকাহ দান করবেন। এছাড়া পরকালে তার জন্য রয়েছে মহা পুরষ্কার।
পবিত্র চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা আরশের নিচে ছায়া দিবেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ إِمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللهِ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ فِي خَلاَءٍ فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسْجِدِ وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِي اللهِ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ إِلَى نَفْسِهَا قَالَ إِنِّي أَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا صَنَعَتْ يَمِينُهُ.
আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সাত শ্রেণীর লোক, যাদেরকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। ১. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ; ২. আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত যুবক; ৩. যে ব্যক্তি আল্লাহকে নির্জনে স্মরণ করে আর তার চোখ দুটি অশ্রুসিক্ত হয়; ৪. এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে; ৫. এমন ব্যক্তিদ্বয় যারা আল্লাহর উদ্দেশে পরস্পর ভালোবাসা রাখে; ৬. এমন ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত রূপসী নারী নিজের দিকে ডাকল আর সে বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি; ৭.এমন ব্যক্তি যে সাদাকাহ করল আর এমনভাবে করল যে, তার বাম হাত জানে না যে তার ডান হাত কি করে। (বুখারী ৬৮০৬)
লজ্জা-স্থান হেফাজতকারীর জন্য রসূল স. কর্তৃক জান্নাতের জিম্মাদারি গ্রহণ-
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ ‏
সাহল ইবনে সা‘দ রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি তার দু-চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দু-রানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জা-স্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তাঁর জান্নাতের জিম্মাদার। (বুখারী ৬৪৭৪)
জেনা ব্যভিচারের কুফল ঃ
জিনা বা ব্যভিচারের কারণে মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বিভিন্ন ধরণের কুফল বয়ে আনে। যিনাকারী বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একথা অনস্বীকার্য যে, জিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে প্রাণঘাতী বিভিন্ন যৌন রোগ সৃষ্টি হয় যার মধ্যে মরণ-ঘাতী এইডস (এইচ, আই, ভি),সিফিলিস, গনোরিয়া, মেহ-প্রমেহ, ক্ষয়রোগ ইত্যাদি প্রধান। আজ থেকে চৌদ্দ-শত বছর পূর্বে বিশ্বনবী সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَ ‏ “‏ يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا ‏.‏ وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ ‏.‏ وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ ‏.‏ وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ
‏আবদুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, ‘হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-স¤পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন।’ (ইবনে মাজাহ-৪০১৯)
ব্যভিচারের কারণে যৌন সম্ভোগের বৈধ পথ রুদ্ধ হয়ে যায়; এর মাধ্যমে বিবাহ, পরিবার,সন্তান সন্তুতির প্রতি মানুষের অবজ্ঞা সৃষ্টি হয়। ফলত: আবহমানকাল ধরে চলে আসা পরিবার প্রথা ধ্বংস হতে বাধ্য হয়। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ইউরোপ আমেরিকা। নায়ক নায়িকাদের বাস্তব জীবনের দিকে লক্ষ করুন যারা অবৈধ ভালোবাসা বিলানোর ফেরিওয়ালা তাদের পারিবারিক জীবনে ভালোবাসার বড় অভাব। এজন্য অধিকাংশ নায়ক নায়িকার সংসার টিকে না।
জিনা মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যকার বিভেদ উঠিয়ে দেয়, এ দুই শ্রেণীর মধ্যে মূল পার্থক্য হল- চতুষ্পদ জন্তুর যৌনসংগমের কোন নির্দিষ্ট পরিসর নেই, কিন্তু মানুষের জন্য এ পরিসর সীমিত। তাই মানুষ যখন জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন এ পরিসরের দেয়াল টপকে মানুষ চতুষ্পদ জন্তুতে পরিণত হয়। এ শ্রেণীর মানুষের দৃষ্টান্ত দিয়ে আল্লাহ বলেন-
وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعٰمُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ
“ আর যারা কাফের তারা উপভোগ করে ও খায় যেমন আনন্দ উপভোগ করে চতুষ্পদ জানোয়ার।” (সূরা মুহাম্মদ- ১২)
জিনাকারির লজ্জা থাকে না। যৌন পিপাসা মিটানোর নেশায় সে সাধারণ মানবিক লজ্জা-শরম হারিয়ে ফেলে। বৈধ-অবৈধর মধ্যে কোন পার্থক্য তার কাছে থাকে না। মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত অর্থনীতিতে জিনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পতিতার উপার্জন সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপার্জন যা সে ব্যভিচারের মাধ্যমে অর্থাৎ দেহ ব্যবসার মাধ্যমে অর্জন করেছে।
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ، قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ شَرُّ الْكَسْبِ مَهْرُ الْبَغِيِّ وَثَمَنُ الْكَلْبِ وَكَسْبُ الْحَجَّامِ ‏
রাফে বিন খাদিজা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যিনাকারিণীর আয়, কুকুর বিক্রিত পয়সা ও রক্তমোক্ষণ-কারীর উপার্জন নিকৃষ্ট ।” (মুসলিম ৩৯০৩)
এজন্য দেখা যায় সারা জীবন যারা অশ্লীলতার বিস্তার ঘটিয়েছে, নিজেদের দেহ যৌবন বিক্রি করে অঢেল সম্পদ উপার্জন করে ভোগ বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে তাদের শেষ জীবন আর্থিক সংকটে পড়েছে। এমনকি চিকিৎসার জন্য মানুষের দারস্ত হতে বাধ্য হয়েছে। দেহ ব্যবসা করে যারা অর্থ উপার্জন করে তাদের এ নিকৃষ্ট উপার্জন সম্পূর্ণভাবে হারাম, এ উপার্জন প্রকৃত পক্ষে তাদের কোন উপকারে আসে না; এ অর্থের মধ্যে বারাকাহ থাকে না ।
জেনার প্রতি উদ্বুদ্ধ কারী প্রচার প্রচারণার কারণে চলমান বিশ্বে ব্যভিচার ও অশ্লীলতার সমস্ত পথ উন্মুক্ত হয়ে আছে। বস্তুবাদী মানুষ যারা মনে করে এই দুনিয়াই শেষ, যতটুকু পার এখানেই আনন্দ উপভোগ করে যাও তারা মানুষকে বিপথগামী করার জন্য বিভিন্ন কলাকৌশল উদ্ভাবন, নারী স্বাধীনতার নামে বেহায়াপনার প্রচলনের মাধ্যমে মানবসমাজকে বিশেষত: যুবক শ্রেণীকে ধ্বংসের অতল-গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তারা নিত্য নতুন পথ ও পদ্ধতির উদ্ভাবন করছে। অশ্লীল সিনেমা, নোংরা পত্র-পত্রিকা, পর্ণ সিডি-ভিসিডি, টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইড এসবের কারণে মানুষ জিনার প্রতি বেশী ঝুঁকে পড়ছে। ইসলাম কোন বিষয় হারাম করলে উক্ত হারাম বিষয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ কারী আনুষঙ্গিক বিষয়ও হারাম করে। অতএব আল্লাহর হারাম-কৃত যিনারপ্রতি উদ্বুদ্ধ কারী সব কিছুই হারাম। যদি কেউ জিনা ও উচ্ছৃঙ্খল যৌন-আচরণে উদ্বুদ্ধ কারী বিষয়ের সাথে স¤পৃক্ত হয় তবে ইসলামী বিধান মতে সে অবশ্যই শাস্তি যোগ্য অপরাধী বিবেচিত হবে। মহান আল্লাহর বাণী-
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
“আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (সূরা ইসরা :৩২)

সমকামিতা ঃ
জৈবিক চাহিদা নিবারণের সবচেয়ে জঘন্য, নোংরা, অসভ্য, অসামাজিক, কুরুচিপূর্ণ, অনৈতিক, প্রকৃতি বিরুদ্ধ, অশ্লীল, অভিশপ্ত, ও ঘৃণিত পন্থা হচ্ছে সমকামিতা। যৌন চাহিদা আছে গরু ছাগলের, আছে কুকুর-বিড়ালেরও। তাই বলে কখনো কোন ষাঁড় অন্য কোন ষাঁড়ের সাথে যৌন-ক্ষুধা নিবারণ করে না। কুকুর-বিড়ালরাও কখনো সম লিঙ্গের সাথে যৌন ক্ষুধা শেয়ার করেনা। পৃথিবীতে যত জীব-জন্তু আছে তারা সবাই কামত্তেজনা উঠলে বিপরীত লিঙ্গের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা শ্রেষ্টজীব হয়েও যৌন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে জানোয়ার থেকেও অধম হয় কি করে? যারা এমনটি করে, এদেরকেই পবিত্র কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করা হয়েছে-
أُولٰٓئِكَ كَالْأَنْعٰمِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ
“তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর।” (সূরা আ’রফ-১৭৯)
সম লিঙ্গ-ধারীরা পরস্পর এক-অন্যের সাথে যৌন চাহিদা মেটানোর নামই হচ্ছে সমকামিতা। সমকামীরা সমাজ, সভ্যতা ও মানবতার শত্রু। কেননা পৃথিবীতে সমাজ, সভ্যতা ও মানবতা টিকিয়ে রাখার জন্য মানব প্রজনন অপরিহার্য। আর সমকামীরা মানব প্রজনন ধ্বংসকারী। কেননা সমকামিতার মাধ্যমে পরিবার গঠন ও সন্তান উৎপাদন অসম্ভব। কাজেই সুস্থ মস্তিষ্কের কোন মানুষ সমকামী হতে পরে না এবং এর সমর্থন ও করতে পারে না। যারা পৃথিবীকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিয়ে যেতে চায় তারাই সমকামী বা সমকামিতার সমর্থনকারী।
ইসলামে সমকামিতা ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ তা‘আলা লুত আ. এর কওমকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন যেসব কারণে এর মধ্যে সমকামিতা ছিল অন্যতম। মহান আল্লাহর বাণী-
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِۦٓ أَتَأْتُونَ الْفٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ الْعٰلَمِينَ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّن دُونِ النِّسَآءِ ۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُونَ
“আমি লুতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি? তোমরা তো কামবশত; পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রমকারী জাতি।” (সূরা আরাফ -৮১-৮২)
أَتَأْتُونَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعٰلَمِينَ وَتَذَرُونَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُم مِّنْ أَزْوٰجِكُم ۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ عَادُونَ
“সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরুষদের সাথে কুকর্ম কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমা-লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।” (সূরা শুয়ারা -১৬৫-১৬৬)
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِۦٓ أَتَأْتُونَ الْفٰحِشَةَ وَأَنتُمْ تُبْصِرُونَأَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّن دُونِ النِّسَآءِ ۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَفَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِۦٓ إِلَّآ أَن قَالُوٓا أَخْرِجُوٓا ءَالَ لُوطٍ مِّن قَرْيَتِكُمْ ۖ إِنَّهُمْ أُنَاسٌ يَتَطَهَّرُونَفَأَنجَيْنٰهُ وَأَهْلَهُۥٓ إِلَّا امْرَأَتَهُۥ قَدَّرْنٰهَا مِنَ الْغٰبِرِينَوَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِم مَّطَرًا ۖ فَسَآءَ مَطَرُ الْمُنذَرِينَ
“স্মরণ কর লুতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ! তোমরা কি কাম-তৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়। উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লুত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম। আর তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম মুষলধারে বৃষ্টি। সেই সতর্ককৃতদের উপর কতই না মারাত্মক ছিল সে বৃষ্টি। (সূরা নামল-৫৪-৫৮)
وَلَمَّا جَآءَتْ رُسُلُنَآ إِبْرٰهِيمَ بِالْبُشْرٰى قَالُوٓا إِنَّا مُهْلِكُوٓا أَهْلِ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ ۖ إِنَّ أَهْلَهَا كَانُوا ظٰلِمِينَقَالَ إِنَّ فِيهَا لُوطًا ۚ قَالُوا نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَن فِيهَا ۖ لَنُنَجِّيَنَّهُۥ وَأَهْلَهُۥٓ إِلَّا امْرَأَتَهُۥ كَانَتْ مِنَ الْغٰبِرِينَوَلَمَّآ أَن جَآءَتْ رُسُلُنَا لُوطًا سِىٓءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا وَقَالُوا لَا تَخَفْ وَلَا تَحْزَنْ ۖ إِنَّا مُنَجُّوكَ وَأَهْلَكَ إِلَّا امْرَأَتَكَ كَانَتْ مِنَ الْغٰبِرِينَإِنَّا مُنزِلُونَ عَلٰىٓ أَهْلِ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ رِجْزًا مِّنَ السَّمَآءِ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ
“আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা লুতের জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা অপরাধী। সে বলল, এই জনপদে তো লুতও রয়েছে। তারা বলল, সেখানে কে আছে, তা আমরা ভাল জানি। আমরা অবশ্যই তাকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে রক্ষা করব তাঁর স্ত্রী ব্যতীত; সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লুতের কাছে আগমন করল, তখন তাদের কারণে সে বিষণ্ণ হয়ে পড়ল এবং তার মন সংকীর্ণ হয়ে গেল। তারা বলল, ভয় করবেন না এবং দুঃখ করবেন না। আমরা আপনাকে ও আপনার পরিবারবর্গকে রক্ষা করবই আপনার স্ত্রী ব্যতীত, সে ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আমরা এই জনপদের অধিবাসীদের উপর আকাশ থেকে আযাব নাজিল করব তাদের পাপাচারের কারণে। (সূরা আনকাবূত-৩১–৩৪)
فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِينَفَجَعَلْنَا عٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍإِنَّ فِى ذٰلِكَ لَءَايٰتٍ لِّلْمُتَوَسِّمِينَ
“অতঃপর সূর্যোদয়ের সময় তাদেরকে প্রচণ্ড একটি শব্দ এসে পাকড়াও করল। অতঃপর আমি জনপদটিকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর কঙ্করের প্রস্থর বর্ষণ করলাম।নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শনা-বলী রয়েছে।” (সূরা হিজর-৭৩-৭৫)
قَالُوا يٰلُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَن يَصِلُوٓا إِلَيْكَ ۖ فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ الَّيْلِ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنكُمْ أَحَدٌ إِلَّا امْرَأَتَكَ ۖ إِنَّهُۥ مُصِيبُهَا مَآ أَصَابَهُمْ ۚ إِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُ ۚ أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيبٍفَلَمَّا جَآءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ مَّنضُودٍمُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَ ۖ وَمَا هِىَ مِنَ الظّٰلِمِينَ بِبَعِيدٍ
“মেহমান ফেরেশতা-গন বলল-হে লুত আ. আমরা তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ হতে প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখনো তোমার দিকে পৌঁছাতে পারবে না। ব্যস তুমি কিছুটা রাত থাকতে থাকতে নিজের লোকজন নিয়ে বাইরে চলে যাও। আর তোমাদের কেউ যেন পিছনে ফিরে না তাকায়। কিন্তু তোমার স্ত্রী নিশ্চয় তার উপরও তা আপতিত হবে, যা ওদের উপর আপতিত হবে। ভোর বেলাই তাদের প্রতিশ্রুতির সময়, ভোর কি খুব নিকটে নয়? অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছল, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম। যার প্রতিটি তোমার পালনকর্তার নিকট চিহ্নিত ছিল। আর সেই পাপিষ্ঠদের থেকে খুব দূরেও নয়।”( সূরা হুদ-৮১-৮৩)
উল্লেখিত আয়াতে কারীমাগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিলে খুব সহজেই বুঝা যায় যে, সমকামিতা ইসলামের দৃষ্টিতে কত জঘন্য অপরাধ। হযরত লুত আ. এর কওম ধ্বংস হওয়ার অন্যতম কারণ হল এই সমকামিতা।
হযরত লুত আ. এর কওমকে যে জায়গায় ধ্বংস করা হয়েছিল সে জায়গাকে ‘ডেড সি’ বা ‘বাহরে মাইয়েত’ বা ‘বাহরে লুত’ নামে খ্যাত। এটি এটি ফিলিস্তিন ও জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল অঞ্চল-জুড়ে নদীর রূপ ধারণ করে আছে। জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ নিচু। এর পানিতে তেলজাতীয় পদার্থ বেশি। এতে কোনও মাছ, ব্যাঙ, এমনকি কোনও জলজ প্রাণীও বেঁচে থাকতে পারে না। এ কারণেই একে মৃত সাগর বলা হয়। সাদুম উপসাগর-বেষ্টিত এলাকায় এক ধরনের অপরিচিত উদ্ভিদের বীজ পাওয়া যায়, সেগুলো মাটির স্তরে স্তরে সমাধিস্থ হয়ে আছে। সেখানে শ্যামল উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যার ফল কাটলে তার মধ্যে পাওয়া যায় ধুলাবালি ও ছাই। এখানকার মাটিতে প্রচুর পরিমাণে গন্ধক পাওয়া যায়। এই গন্ধক উল্কা পতনের অকাট্য প্রমাণ। সম্ভবত এ শাস্তি এসেছিল ভয়ানক ভূমিকম্প ও অগ্নি উদিগরণকারী বিস্ফোরণ আকারে। ভূমিক¤প সে জনপদকে ওলটপালট করে দিয়েছিল। অগ্নি উদিগরণকারী পদার্থ বিস্ফোরিত হয়ে তাদের উপর প্রস্তর বর্ষণ করেছিল। আধুনিক যুগের বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, লুত আ.-এর জাতি যে নগরীতে বসবাস করত, তা মৃত সাগরে নিমজ্জিত হয়েছে। বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ থেকে এর সাক্ষ্য পাওয়া যায়। গবেষণায় জানা যায়, সেখানে একটা শস্য-শ্যামল উপত্যকা বিদ্যমান ছিল। এটাই ছিল সাদুম উপত্যকা। এর মধ্যে লুত আ.এর জাতির বড় বড় শহর সাদুম, আমুরা, আদমা, সানবুয়েম ও দুগার অবস্থিত ছিল। বাইবেল, গ্রিক ও ইতালির প্রাচীন গ্রন্থাবলী থেকে জানা যায়, এ অঞ্চলের স্থানে স্থানে পেট্রলসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক স¤পদের কূপ ছিল। কোনও কোনও স্থানে জমিন থেকে দাহ্য গ্যাসও বের হতো। এখনো সেখানে ভূগর্ভে পেট্রল ও গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে অনুমান করা হয়েছে যে ভূমিকম্পের প্রবল আলোড়নের সঙ্গে পেট্রল ও গ্যাস জমিন থেকে বিস্ফোরিত হয়। সে বিস্ফোরণে গোটা অঞ্চল উড়ে যায়।
১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধানকারী একটি আমেরিকান দল ডেড সির পার্শ্ববর্তী এলাকায় এক বিরাট কবরস্থান দেখতে পায়। যার মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি কবর আছে। এটা থেকে অনুমান করা হয় যে কাছেই কোনও বড় শহর ছিল। কিন্তু আশপাশে এমন কোনও শহরের ধ্বংসাবশেষ নেই, যার সন্নিকটে এত বড় কবরস্থান হতে পারে। এতে সন্দেহ প্রবল হয় যে এটি যে শহরের কবরস্থান ছিল, তা সাগরে নিমজ্জিত হয়েছে। সাগরের দক্ষিণে যে অঞ্চল রয়েছে, তার চারদিকেও ধ্বংসলীলা দেখা যায়। জমিনের মধ্যে গন্ধক, আলকাতরা, প্রাকৃতিক গ্যাস এত বেশি মজুদ দেখা যায় যে এটি দেখলে মনে হয়, কোনও একসময় বিদ্যুৎ পতনে বা ভূমিকম্পের গলিত পদার্থ বিস্ফোরণে এখানে এক জাহান্নাম তৈরি হয়েছিল। (সীরাতে সরওয়ারে আলম, দ্বিতীয় খন্দ)
বর্তমানে সমকামিতার অপরাধ সারা বিশ্বে মহামারির রূপ ধারণ করছে তা হলে তাদের উপর কেন আসমানী আযাব আসে না? মহানবী স. আল্লাহর কাছে তার উম্মতকে সমূলে বিনাশ না করার ফরিয়াদ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা সে ফরিয়াদ কবুল করেছেন। হয়তবা সে জন্য বর্তমানেও কেউ কেউ সমকামিতার মতো জঘন্য অপরাধ করলেও তাদের সমূলে ধ্বংস করে দেওয়া হয় না। তবে সন্দেহ নেই যে, প্রকৃতি এই প্রকৃতি-বিরোধী কাজের প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়ে না। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল ও এপিডিওলজিতে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, সমকামী ও উভয়-কামীরা অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করে। তাদের গড় আয়ু স্বাভাবিকের চেয়ে কম। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে স্বাভাবিক যৌনাচারের চেয়ে সমকামীদের অবসাদ, আত্মহত্যা ও নেশায় আসক্তির আশঙ্কা প্রায় ৫০ গুণ বেশি। সমকামিতা সিফিলিসের মতো রোগ ছড়াতেও ব্যাপকভাবে দায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় ২০০৮ সালে সিফিলিস ৪০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার কারণ উদ্ঘাটনে সমকামিতার সম্পর্ক পাওয়া যায়। সমকামিতা এমন বিষয়, পৃথিবীর সব ধর্মে যা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু ধর্মবিরোধীই নয়, এটি সম্পূর্ণ অ-প্রাকৃতিক, অবৈজ্ঞানিক ও নিকৃষ্টতম কাজ। অল্প কিছুদিন আগে বিশ্বগণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে ইংল্যান্ডে সমকামীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে সুপার গনোরিয়া। সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল ও প্রিভেনশনের মতে, সমকামীদের মধ্যে এইডস আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। ইতিমধ্যে গে রোগ নামে কিছু রোগ পরিচিতি লাভ করেছে। এর একটি হলো ‘স্টাপ স্টেইন’। এগুলো প্রকৃতির প্রতিশোধ ছাড়া আর কিছুই নয়।
শুধু ইসলাম ধর্মগ্রন্থ কুরআনেই নয়, বরং বাইবেলেও সমকামিতা মারাত্মক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। (আদি পুস্তক ১৯:১-১৩; লেবীয় ১৮:২২; রোমীয় ১:২৬-২৭; ১ করিন্থীয় ৬:৯) রোমীয় ১:২৬-২৭ পদ, সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে, ‘ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া এবং তাঁকে অস্বীকার করার ফলস্বরূপ সমকামিতার শাস্তি দেওয়া হয়েছে। লোকেরা যখন অবিশ্বাসের কারণে পাপ করতেই থাকে, তখন ঈশ্বর “লজ্জা-পূর্ণ কামনার হাতে” তাদের ছেড়ে দেন যেন তারা আরও জঘন্য পাপে ডুবে যায় এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে থাকার ফলে নিষ্ফল ও নৈরাশ্যের জীবন অনুভব করতে পারে।’
১ করিন্থীয় ৬:৯ পদে বলা হয়েছে যে, ‘যারা সমকামিতায় “দোষী”, তারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকার পাবে না। ঈশ্বর সমকামিতার মনোভাব দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেন নাই। পবিত্র বাইবেল বলেছে, লোকেরা পাপের কারণে সমকামী হয় (রোমীয় ১:২৪-২৭) এবং এটা তাদের নিজেদের পাপপূর্ণ ইচ্ছার পরিণতি। বাইবেল সমকামিতাকে অন্যান্য পাপের মত “বড়” বলে বর্ণনা করে। করিন্থীয় ৬:৯-১০ পদে যে পাপগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সমকামিতা হচ্ছে সেগুলোর একটি, যা কিনা ঈশ্বরের রাজ্য থেকে একজনকে দূরে রাখে।
রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাবধান বাণী-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَنْ وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা যদি কাউকে পাও যে লুতের সম্প্রদায় যা করত তা করছে, তবে হত্যা কর যে করছে তাঁকে আর যাকে করা হচ্ছে তাকেও। ( আবু দাউদ -৪৪৬৩)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، فِي الْبِكْرِ يُوجَدُ عَلَى اللُّوطِيَّةِ قَالَ يُرْجَمُ
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘অবিবাহিতদের লাওয়াতাতে (পায়ুকামে) লিপ্ত পাওয়া গেলে রজম করা হবে।’। (আবু দাউদ -৪৪৬৩)
عنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَقِيلٍ، أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرًا، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي عَمَلُ قَوْمِ لُوطٍ
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আকীল রহ. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, জাবির রা. কে আমি বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লহ সল্লল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি যে কুকর্মটি আমার উম্মতের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সর্বাধিক ভয় করি তা হল লুত সম্প্রদায়ের কুকর্ম।’ (তিরমিযি ১৪৫৭)

حَدَّثَنِي مَالِك أَنَّهُ سَأَلَ ابْنَ شِهَابٍ عَنْ الَّذِي يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَقَالَ ابْنُ شِهَابٍ عَلَيْهِ الرَّجْمُ أَحْصَنَ أَوْ لَمْ يُحْصِنْ
মালিক রহ. ইবনে শিহাবকে জিজ্ঞেস করলেন, পুরুষে পুরুষে সমকামিতা করলে তার শাস্তি কি ? তিনি বললেন, তাকেও প্রস্তরাঘাত করতে হবে, সে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত। (মুয়াত্তা মালেক-১৫১৮)
وَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْعِلْمِ فِي حَدِّ اللُّوطِيِّ فَرَأَى بَعْضُهُمْ أَنَّ عَلَيْهِ الرَّجْمَ أَحْصَنَ أَوْ لَمْ يُحْصِنْ وَهَذَا قَوْلُ مَالِكٍ وَالشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ ‏.‏ وَقَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ فُقَهَاءِ التَّابِعِينَ مِنْهُمُ الْحَسَنُ الْبَصْرِيُّ وَإِبْرَاهِيمُ النَّخَعِيُّ وَعَطَاءُ بْنُ أَبِي رَبَاحٍ وَغَيْرُهُمْ قَالُوا حَدُّ اللُّوطِيِّ حَدُّ الزَّانِي وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِيِّ وَأَهْلِ الْكُوفَةِ ‏.‏
ইমাম তিরমিযি বহ. বলেন, সমকামিতার শাস্তি কি হবে সে ব্যাপারে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ ও ইমাম ইসহাক র. এদের মতে সমকামীদেরকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হবে; চাই বিবাহিত হোক অথবা না করা হোক। হাসান বছরি, ইব্রাহীম নাখ‘য়ী, আতা ইবনে আবি রবাহ, সুফিয়ান সাওরি ও ইমাম আবু হানিফা র.এদের মতে সমকামীদের উপর জেনার হদ লাগানো হবে অর্থাৎ অবিবাহিত হলে বেত্রাঘাত আর বিবাহিত হলে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা। (তিরমিযি- ১৪৫৬)
সুতরাং জেনা, ব্যভিচার, ধর্ষণ,ও সমকামিতাসহ যাবতীয় অশ্লীলতার দার রুদ্ধ করে একটি সোনালী সমাজ উপহার দেওয়ার জন্য ইসলাম যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার অন্য কোন দৃষ্টান্ত নেই। কাজেই অশ্লীলতা মুক্ত সমাজ গড়তে হলে কুরআনী ফর্মুলা অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে। নতুবা পৃথিবী থেকে কোন দিন অশ্লীলতা দূর তো হবেই না বরং দিন দিন ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হতে থাকবে।