ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকরা সর্বদাই ইসলাম ও নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) কে জড়িয়ে নানাধরণের মিথ্যাচার করে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম হল মিরাজের রাতে নাকি নবী (ﷺ) চাচাতো বোন উম্মে হানী (রা.) এর বাড়ীতে তাঁর সঙ্গে অবৈধ কাজ করেন (নাউযুবিল্লাহ) এবং সেটা জানাজানি হয়ে গেলে এটাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মিরাজের কাহিনী তৈরি করেন (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)।
এই অশালীন অভিযোগের পেছনে তারা যে ঘটনাকে ‘দলিল’ হিসাবে দাঁড় করায় তা হলোঃ
قال محمد بن إسحاق : وكان فيما بلغني عن أم هانئ بنت أبي طالب رضي الله عنها ، واسمها هند ، في مسرى رسول الله صلى الله عليه وسلم ، أنها كانت تقول : ما أسري برسول الله صلى الله عليه وسلم إلا وهو في بيتي ، نام عندي تلك الليلة في بيتي ، فصلى العشاء الآخرة ، ثم نام ونمنا ، فلما كان قبيل الفجر أهبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ، فلما صلى الصبح وصلينا معه ، قال : يا أم هانئ ، لقد صليت معكم العشاء الآخرة كما رأيت بهذا الوادي ، ثم جئت بيت المقدس فصليت فيه ، ثم قد صليت صلاة الغداة معكم الآن كما ترين ، ثم قام ليخرج ، فأخذت بطرف ردائه ، فتكشف عن بطنه كأنه قبطية مطوية ، فقلت له : يا نبي الله ، لا تحدث بهذا الناس فيكذبوك ويؤذوك ، قال والله لأحدثنهموه . قالت : فقلت لجارية لي حبشية : ويحك اتبعي رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى تسمعي ما يقول للناس ، وما يقولون له
فلما خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى الناس أخبرهم ، فعجبوا وقالوا : ما آية ذلك يا محمد ؟ فإنا لم نسمع بمثل هذا قط ؛ قال : آية ذلك أني مررت بعير بني فلان بوادي كذا وكذا . فأنفرهم حس الدابة ، فند لهم بعير ، فدللتهم عليه ، وأنا موجه إلى الشام . ثم أقبلت حتى إذا كنت بضجنان مررت بعير بني فلان ، فوجدت القوم نياما ، ولهم إناء فيه ماء قد غطوا عليه بشيء ، فكشفت غطاءه وشربت ما فيه ثم غطيت عليه كما كان ؟ وآية ذلك أن عيرهم الآن يصوب من
البيضاء ثنية التنعيم يقدمها جمل أورق ، عليه غرارتان ، إحداهما سوداء ، والأخرى برقاء . قالت : فابتدر القوم الثنية فلم يلقهم أول من الجمل كما وصف لهم ، وسألوهم عن الإناء ، فأخبروهم أنهم وضعوه مملوءا ماء ثم غطوه ، وأنهم هبوا فوجدوه مغطى كما غطوه ، ولم يجدوا فيه ماء . وسألوا الآخرين وهم بمكة ، فقالوا : صدق والله ، لقد أنفرنا في الوادي الذي ذكر ، وند لنا بعير فسمعنا صوت رجل يدعونا إليه حتى أخذناه.
মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বলেন, মুহাম্মদ ইবন সাইব কালবী…. উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-এর মিরাজ সম্পর্কে বলেন, যেই রাত্রে রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-এর মিরাজ সংঘটিত হয় সেই রাতে তিনি আমার বাড়ীতে শায়িত ছিলেন। ঈশার সলাত শেষে তিনি ঘুমিয়ে যান। আমরাও ঘুমিয়ে যাই। ফজরের সামান্য আগে তিনি আমাদেরকে জাগালেন। তিনি সালাত পড়লেন এবং আমরাও তাঁর সাথে [ফজরের] সালাত পড়লাম তখন তিনি বললেনঃ হে উম্মে হানী, তোমরা তো দেখেছো আমি তোমাদের সাথে ঈশার সালাত পড়ে তোমাদের এখানেই শুয়ে পড়ি। কিন্তু এরপরে আমি বাইতুল মুকাদ্দাস গমন করি এবং সেখানে সলাত আদায় করি। এখন ফজরের সলাত তোমাদের সাথে পড়লাম যা তোমরা দেখলে। উম্মে হানী বলেন, এই বলে তিনি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। আমি তাঁর চাদরের কিনারা ধরে ফেললাম। ফলে তাঁর পেট থেকে কাপড় সরে গেল। তা দেখতে ভাঁজ করা কিবতী বস্ত্রের মত স্বচ্ছ ও মসৃণ। আমি বললাম : হে আল্লাহর নবী! আপনি এ কথা লোকদের কাছে প্রকাশ করবেন না। অন্যথায় তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলবে এবং আপনাকে কষ্ট দেবে। কিন্তু তিনি বললেন : আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তাদের কাছে এ ঘটনা ব্যক্ত করব। তখন আমি আমার এক হাবশী দাসীকে বললাম ; বসে আছো কেন, জলদি, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)-এর সঙ্গে যাও, তিনি লোকদের কি বলেন তা শোনো, আর দেখো তারা কী মন্তব্য করে। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বের হয়ে গিয়ে লোকদের এ ঘটনা জানালেন। তারা বিস্মিত হয়ে বললো, ‘হে মুহাম্মাদ! এ যে সত্য তার প্রমাণ? এমন ঘটনা তো আমরা কোনোদিন শুনিনি।’ তিনি বললেন, ‘প্রমাণ এই যে, আমি অমুক উপত্যকায় অমুক গোত্রের একটি কাফেলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। সহসা আমার বাহন জন্তুটির গর্জনে তারা ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের একটি উট হারিয়ে যায়। আমি তাদের উটটির সন্ধান দিই। আমি তখন শামের দিকে যাচ্ছিলাম। এরপর সেখান থেকে ফিরে আসার পথে যখন দাজনান পর্বতের কাছে পৌঁছি, তখন সেখানেও একটি কাফেলা দেখতে পাই। তারা সকলে নিদ্রিত ছিল। তাদের কাছে একটি পানিভরা পাত্র ছিল, যা কোনো কিছু দিয়ে ঢাকা ছিল। আমি সে ঢাকনা সরিয়ে তা থেকে পানি পান করি। এরপর তা আগের মতো করে ঢেকে রেখে দিই। আর এর প্রমাণ এই যে—সে কাফেলাটি এখন বায়যা গিরিপথ থেকে ‘সানিয়াতুত তানঈমে’ নেমে আসছে। তাদের সামনে একটি ধূসর বর্ণের উট আছে, যার দেহে একটি কালো ও আরেকটি বিচিত্র বর্ণের ছাপ আছে।’”
উম্মে হানী(রা.) বলেন, “একথা শোনামাত্র উপস্থিত লোকেরা সানিয়ার দিকে ছুটে গেলো। তারা ঠিকই সম্মুখভাগের উটটিকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বর্ণনামতো পেলো। তারা কাফেলার কাছে তাদের পানির পাত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তারা বললো, ‘আমরা পানির একটি ভরা পাত্রে ঢাকনা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। জাগ্রত হওয়ার পর পাত্রটিকে যেমন রেখেছিলাম তেমনই ঢাকা পাই, কিন্তু ভেতর পানিশূন্য ছিল।’ তারা অপর কাফেলাকেও জিজ্ঞেস করলো। সে কাফেলাটি তখন মক্কাতেই ছিল। তারা বললো, ‘আল্লাহর কসম! তিনি সত্যই বলেছেন। তিনি যে উপত্যকার কথা বলেছেন, সেখানে ঠিকই আমরা ভয় পেয়েছিলাম। তখন আমাদের একটি উট হারিয়ে যায়। আমরা অদৃশ্য এক ব্যক্তির আওয়াজ শুনতে পাই,যে আমাদের উটটির সন্ধান দিচ্ছিলো। সেমতে আমরা উটটি ধরে ফেলি।” )আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ববারনী-২৪/৪৩২, তাফসির ইবন কাসির, ৬ষ্ঠ খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা বনী ইস্রাঈলের ১ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৫১)
মুসনাদ আবু ইয়ালা থেকে অনুরূপ আরো একটি রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন ইবন কাসির(র.)। রেওয়ায়েতটি ইমাম তাবারানী(র.) এর মু’জামুল কাবিরেও আছে। (তাফসির ইবন কাসির, ৬ষ্ঠ খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা বনী ইস্রাঈলের ১ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৫১-২৫৩)
মি‘রাজ সম্পর্কিত এই বর্ণনাটির দ্বারা ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকরা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর পবিত্র চরিত্রে কলংঙ্ক লেপনের অপতৎপরতা চালায়।
ইসলামবিরোধী নাস্তিকদের আলোচ্য অপবাদের জবাব :
১. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর চরম শত্রুরা তাকে পাগল বলেছেন, গণক বলেছেন, উন্মাদ বলেছেন, কবি বলেছেন কিন্তু তার চরিত্র নিয়ে বা উম্মে হানীকে নিয়ে কোন কথা তার সময়ের কোন মুশরিক বা কাফের বলেছে এমন কোন প্রমাণ নাস্তিকদের কাছে আছে কিনা থাকলে পেশ করুক।
২. পবিত্র কুরআনের চারিত্রিক সনদ প্রদান :
وَإِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيمٍ
আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা আল কলাম-৪)
পবিত্র কুরআনের সাথে যদি অন্য কোন কিছু সাংঘর্ষিক হয় তবে তা বাতিল হবে কুরআনের বক্তব্য সঠিক হবে। এটা ইসলামের সতসিদ্ধ মূলনীতি।
৩. বর্ণনাটি সহিহ নয় ঃ
একটি বিবরণ থেকে কোনো তত্ত্ব প্রমাণ করতে হলে প্রথমে যাচাই করে দেখতে হয় সেটি কতটুকু নির্ভরযোগ্য বর্ণনা। মিরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) উম্মে হানী(রা.) এর বাড়ীতে ছিলেন এই মর্মে যে দুইটি রেওয়ায়েত বা বিবরণ উপরে উল্লেখ আছে এর ১মটির ব্যাপারে ইবন কাসির(র.) এর অভিমত হচ্ছেঃ এতে কালবী নামে একজন রাবী (বর্ণনাকারী) আছেন যিনি মুহাদ্দিসীনদের নিকট বর্জিত। (তাফসির ইবন কাসির, ৬ষ্ঠ খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা বনী ইস্রাঈলের ১ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৫১) অর্থাৎ বর্ণনাটি কোনো সহীহ বর্ণনা নয়।
এ ছাড়া মুসনাদ আবু ইয়ালা এবং ইমাম তাবারানী (র.) এর মু’জামুল কাবিরে অন্য যে রেওয়ায়েতটি আছে, সেটির বর্ণনাকারীদের একজন হচ্ছেনঃ আব্দুল আ’লা ইবন আবু মুসাওয়ির। তার ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের অভিমত হচ্ছেঃ তিনি কাযযাব (মিথ্যাবাদী)। (তাফসির ইবন কাসির (আরবি), তাহকিকঃ সামি বিন মুহাম্মাদ আস সালামাহ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪২, টিকা নং ৮) কাজেই তার বর্ণিত হাদিস সহীহ নয়।
আমরা আরও দেখবো অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরাম এই রিওয়ায়েতগুলো সম্পর্কে কি বলেছেন-
أما الروايات التي فيها أنه كان صلى الله عليه وسلم نائما في بيت أم هانئ ليلة الإسراء والمعراج فإنها لا تثبت ، وبيان ذلك كما يلي
الرواية الأولى
أخرجها ابن أبي عاصم في “الآحاد والمثاني” (৩৯) ، والطبراني في “المعجم الكبير” (২৪/৪৩২) ، من طريق عَبْدِ الْأَعْلَى بْنِ أَبِي الْمُسَاوِرِ، قَالَ: سَمِعْتُ عِكْرِمَةَ ، يَقُولُ: ” أَخْبَرَتْنِي أُمُّ هَانِئٍ بِنْتُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، قَالَتْ: ” بَاتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدِي لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ ، فَذَكَرَ أَمْرَهُ وَكَيْفَ أُسْرِيَ بِهِ قَالَ: وَإِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَخْرُجَ إِلَى قُرَيْشٍ فَأُخْبِرَهُمْ فَأَخْبَرَهُمْ فَكَذَّبُوهُ ، وَصَدَّقَهُ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، فَسُمِّيَ مِنْ يَوْمَئِذٍ الصِّدِّيق
وإسناده تالف ، فيه عبد الأعلى بن أبي المساور .
قال الذهبي في “تاريخ الإسلام” (৪/৪২৮) :” ضَعَّفَهُ الْكُلُّ ، قَالَ ابْنُ مَعِينٍ: لَيْسَ بِشَيْءٍ ، وَقَالَ الْبُخَارِيُّ: مُنْكَرُ الْحَدِيثِ ، وَقَالَ النَّسَائِيُّ وَغَيْرُهُ: مَتْرُوكٌ “. انتهى
ত্ববারনীর বর্ণনার মধ্যে আব্দুল আ‘লা ইবনে আবিল মুসাবির নামক একজন বর্ণনাকারী আছে ইমাম যাহাবী তারিখুল ইসলাম ৪/৪২৮ পৃষ্ঠায় তার ব্যাপারে বলেছেন সকল মুহাদ্দিস তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম বুখারী তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। ইমাম নাসাঈ তাকে পরিত্যক্ত বলেছেন।
ولذا ضعف الهيثمي هذه الرواية في “مجمع الزوائد” (১/৪৫০) ، فقال :” رواه الطبراني في الكبير ، وفيه عبد الأعلى بن أبي المساور ، متروك كذاب “. انتهى
আল্লামা নূরুদ্দীন হাইসামী তাকে (মাজমাউজ ঝাওয়ায়েদ ১/৪৫০) পরিত্যাক্ত ও চরম মিথ্যাবাদী বলেছেন।
الرواية الثانية :
أخرجها الطبري في “تفسيره” (১৪/৪১৪) ، من طريق محمد بن إسحاق ، قَالَ: حدثني مُحَمَّدُ بْنُ السَّائِبِ ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ بَاذَامَ ، عَنْ أُمِّ هَانِئِ بِنْتِ أَبِي طَالِبٍ ، فِي مَسْرَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهَا كَانَتْ تَقُولُ: ” مَا أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا وَهُوَ فِي بَيْتِي نَائِمٌ عِنْدِي تِلْكَ اللَّيْلَةَ ، فَصَلَّى الْعِشَاءَ الْآخِرَةَ ، ثُمَّ نَامَ وَنِمْنَا ، فَلَمَّا كَانَ قُبَيْلَ الْفَجْرِ أَهَبَّنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَلَمَّا صَلَّى الصُّبْحَ وَصَلَّيْنَا مَعَهُ قَالَ: يَا أُمَّ هَانِئٍ لَقَدْ صَلَّيْتُ مَعَكُمُ الْعِشَاءَ الْآخِرَةَ كَمَا رَأَيْتِ بِهَذَا الْوَادِي ، ثُمَّ جِئْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ فَصَلَّيْتُ فِيهِ ، ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلَاةَ الْغَدَاةِ مَعَكُمُ الْآنَ كَمَا تَرَيْنَ
وإسناده تالف أيضا ، فيه محمد بن السائب الكلبي ، كذاب
قال ابن أبي حاتم في “الجرح والتعديل” (৭/২৭১) :” سألت أبى عن محمد بن السائب الكلبى فقال : الناس مجتمعون على ترك حديثه ، لا يشتغل به ، هو ذاهب الحديث ” انتهى
দ্বিতীয় বর্ণনায় মুহাম্মাদ ইবনে সায়েব আল কালবী নামক একজন বর্ণনাকারী আছে যার সম্পর্কে ইনে আবী হতেম ‘যারাহ আত্ তা‘দীল গ্রন্থে (৭/২৭১) উল্লেখ করেছেন যে, মুহাদ্দিসীনে কেরাম সবাই তার হাদীস পরিত্যাগ করার ব্যপারে একমত।
ثم هذه الروايات مخالفة لما رُوي عن أم هانئ أيضا ، أنها ذكرت أن النبي صلىالله عليه وسلم أسري به من المسجد الحرام
وهذه الرواية أخرجها أبو يعلى في “معجمه” (১০) ، من طريق مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْوَسَاوِسِيُّ ، قَالَ: حَدَّثَنَا ضَمْرَةُ بْنُ رَبِيعَةَ ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي عَمْرٍو السَّيْبَانِيِّ ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ مَوْلَى أُمِّ هَانِئٍ ، عَنْ أُمِّ هَانِئٍ ، قَالَتْ: ” دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِغَلَسٍ ، وَأَنَا عَلَى فِرَاشِي ، فَقَالَ: شَعَرْتُ أَنِّي نِمْتُ اللَّيْلَةَ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ، فَأَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ ، فَذَهَبَ بِي إِلَى بَابِ الْمَسْجِدِ… ” ثم ساق الحديث
وإسنادها ضعيف أيضا ، فيه أبو صالح مولى أم هانئ ، ومحمد بن إسماعيل الوساوسي ، وكلاهما ضعيف
তাছাড়া উম্মে হানীর বর্ণনা কোনভাবেই গ্রহযোগ্য নয়। কেননা তার দুটি বর্ণনা একটি আরেকটির সাথে সাংঘর্ষিক। প্রথম বর্ণনাতে আছে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) উম্মে হানীর বাড়িতে ছিলেন আর দ্বিতীয় বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ(ﷺ) মসজিদে হারামে ছিলেন।
উম্মে হানী কিভাবে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে ঈশা ফজর নামাজ পড়েন! অথচ নামাজ ফরজ হয়েছে মি‘রাজ রজনীতে।
উম্মে হানী ইসলাম গ্রহন করেছেন মক্কা বিজয়ের সময় তাহলে মি‘রাজ রজনীতে কিভাবে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে নামাজ পড়েন? উম্মে হানী(রা.) এর ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে বিশুদ্ধ মত উল্লেখ করে ইমাম শামসুদ্দিন যাহাবী(র.) বলেছেন, تأخراسلامها واسلت يوم الفتح অর্থঃ তাঁর [উম্মে হানী(রা.)] ইসলাম গ্রহণে বিলম্ব হয় এবং তিনি মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণ করেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা – শামসুদ্দিন যাহাবী ২/৩১২) উম্মে হানী(রা.) যদি মক্কা বিজয়ের সময়ে ইসলাম গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে তিনি কী করে এর এক দশক আগে মিরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে সলাত আদায় করেন?!! এ থেকে নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় যে এ বিবরণ মোটেও সহীহ নয়।
বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত বর্ণনার সাথে এই বর্ণনায় আরো মারাত্মক সাংঘর্ষিক তথ্য পাওয়া যায়। মিরাজের যাত্রা কোথা থেকে শুরু হয়েছে তা উল্লেখ করে আল কুরআনে উল্লেখ আছেঃ
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
অর্থঃ “পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসায়, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বারাকাতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা বনী ইসরাঈল-১)
অর্থাৎ মিরাজের যাত্রা শুরু হয়েছে মসজিদুল হারাম থেকে। নবী(ﷺ) মসজিদুল হারামে ছিলেন, সেখান থেকে তাঁকে জেরুজালেমে নেয়া হয়েছিলো। সহীহ হাদিসে আরো নির্দিষ্ট করে উল্লেখ আছে যে তিনি মিরাজের রাতে মসজিদুল হারামের মধ্যে কোন অংশে ছিলেন।
“মালিক ইবনু সা‘সা‘ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রাতে তাঁকে ভ্রমণ করানো হয়েছে সে রাতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এক সময় আমি কা‘বা ঘরের হাতিমের অংশে ছিলাম। কখনো কখনো রাবী (কাতাদাহ) বলেছেন, হিজরে শুয়ে ছিলাম।… .. … …” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩৮৮৭)
উম্মে হানী(রা.) এর ঘর থেকে মিরাজ শুরু হবার কথা কানো সহীহ বিবরণে উল্লেখ নেই বরং এর সাথে সাংঘর্ষিক তথ্য আছে। সহীহ বিবরণে এমন তথ্য উল্লেখ আছে যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে মিরাজের রাতে নবী(ﷺ) মোটেও উম্মে হানী(রা.) এর ঘরে ছিলেন না। বরং মিরাজ শুরু হয়েছে অন্য স্থান থেকে, মসজিদুল হারাম থেকে।
এতো সহীহ বিবরণ থাকা সত্ত্বেও এর সাথে বিপরীত তথ্যের অনির্ভরযোগ্য কিছু বিবরণ ব্যবহার করে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ও উম্মে হানী(রা.) এর নামে জঘন্য অপবাদ রটনা করে ইসলামের শত্রুরা। ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের প্রচারণাগুলোর ভিত্তি সাধারণত এমনই হয়।
৪. নাস্তিকদের বিকৃত মস্তিষ্ক থেকে বাস্তবতা বিবর্জিত উক্তির অসরতা :
অনেক অজ্ঞ ইসলামবিরোধী এক্টিভিস্টকে বলতে দেখা যায় যেঃ কোনো কিছু নিজেদের মতের বাইরে গেলেই নাকি মুসলিমরা সেটাকে জোর করে যঈফ (দুর্বল) বর্ণনা বানিয়ে দেয়। উলুমুল হাদিস সম্পর্কে চরম অজ্ঞতা এবং অহেতুক জেদের কারণে তারা এই জাতীয় কথা বলে। একজন মুসলিমের পক্ষে নিজের খেয়াল খুশীমত কোনো বর্ণনাকে সহীহ (বিশুদ্ধ), যঈফ (দুর্বল) এসব জিনিস বলে দেয়া সম্ভব নয়। উলুমুল হাদিস শাস্ত্রের দীর্ঘ নানা প্রক্রিয়া অতিক্রম করে একজন মুহাদ্দিস বিভিন্ন বর্ণনা সম্পর্কে এইসব রায় প্রদান করেন। তবু আমরা ঐসব অজ্ঞ লোকদের জন্য তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি যে – মিরাজের রাতে রাসুল(ﷺ) এর উম্মে হানী(রা.) এর বাড়িতে থাকার বিবরণগুলো নির্ভরযোগ্য। এবার আমরা এর বিশ্লেষণ করি।
(ক) ঐ বিবরণগুলোর কোনো জায়গায় কি এই উল্লেখ আছে যে রাসুল(ﷺ) উম্মে হানী(রা.) এর সাথে কোনোরূপ অবৈধ কর্ম করেছেন (নাউযুবিল্লাহ) বা কেউ তাঁকে এ জন্য অভিযুক্ত করেছে? উত্তর হচ্ছে না। কোথাও এ উল্লেখ নেই যে তিনি এমন কিছু করেছেন বা কেউ তাঁকে এহেন কর্মের জন্য অভিযুক্ত করেছে। এর দূরতম কিছুও কোনো জায়গায় উল্লেখ নেই। তিনি তো আরবের আল আমিন। বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী। কেউ তাঁকে কখনো এমন কিছুর জন্য অভিযুক্ত করেনি।
ঐ বিবরণে শুধু এটা উল্লেখ আছে যে রাসুল(ﷺ) তাঁর চাচাতো বোনের বাড়ীতে ঈশার সলাত আদায় করেছেন, নিদ্রা গেছেন, সকালে সবাইকে নিয়ে ফজরের সলাত পড়েছেন এবং এরপর বাইতুল মুকাদ্দাসে তাঁর ইসরা ভ্রমণের কথা বলেছেন। যে বিবরণকে ‘দলিল’ ধরে ইসলামবিরোধীরা রাসুল(ﷺ) এর নামে বাজে কথা বলে, খোদ সেই বিবরণেই সামান্যতমও এ উল্লেখ পাওয়া যায় না যে, কেউ রাসুল(ﷺ) এর নামে তাঁর চাচাতো বোনের সাথে অবৈধ কর্ম করার অভিযোগ করেছে। যেখানে ঐ যুগের লোকেদের মাথাতেই এমন চিন্তা এলো না বা তারা কোনোরূপ অভিযোগ করলো না, সেখানে দেড় হাজার পরে মুক্তচিন্তার দাবিদার কিছু মানুষ নতুন করে এই জিনিস বানালো। আসলে সমস্যা তো ঐ সকল নাস্তিক-মুক্তমনার মস্তিষ্কে, যারা সাধারণ জিনিসের ভেতর থেকেও সীমাহীন অশ্লীলতা বের করে ফেলতে পারে। নিজ মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য বানোয়াট অভিযোগ সৃষ্টি করতে তাদের একটুও বাধে না।
(খ) উম্মে হানী(রা.) এর মূল নাম ফাখতা। তিনি ছিলেন নবী(ﷺ) এর চাচা আবু তালিবের কন্যা। আকীল, জাফর এবং আলী(রা.) এর বোন। (ইবন হিশাম ২/৪২০; আ’লাম আন নিসা ৪/৪১৪; আল ইসতি’আব ২/৭৭২; আসহাবে রাসুলের জীবনকথা – মুহাম্মাদ আব্দুল মা’বুদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৮)
নবী(ﷺ) ছোটবেলা থেকে চাচা আবু তালিবের কাছে মানুষ হন। চাচাতো ভাই-বোনদের সাথে ছোটবেলা থেকেই তিনি একসাথে বড় হয়েছেন। মিরাজের ঘটনা ঘটেছিল মক্কায়, পর্দার বিধান তখনো নাজিল হয়নি। যে চাচাতো বোনের সাথে তিনি ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছেন, তাঁর বাড়ীতে স্বাভাবিকভাবেই তিনি আসা-যাওয়া করতেই পারেন। ঐ বর্ণনাতে এমনই একটি জিনিসের উল্লেখ আছে। এমন স্বাভাবিক একটি জিনিস থেকে একমাত্র বিকৃত যৌনোন্মাদ ছাড়া আর কেউ অশ্লীল অভিযোগ তুলতে পারে না। এইসব বিকৃত অভিযোগের দ্বারা ‘মুক্তচিন্তার’ ধ্বজাধারীরা মূলত নিজেদের কুৎসিত চিন্তা-চেতনার স্বরূপই উন্মোচন করেছে।
উপরে উম্মে হানী(রা.) যে রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হয়েছে সেখান আমরা দেখেছি, ঘটনার বর্ণনা এভাবে আছে “ঈশার সলাত শেষে তিনি ঘুমিয়ে যান। আমরাও ঘুমিয়ে যাই। ফজরের সামান্য আগে তিনি আমাদেরকে জাগালেন। তিনি সালাত পড়লেন এবং আমরাও তাঁর সাথে [ফজরের] সলাত পড়লাম তখন তিনি বললেনঃ হে উম্মে হানী, তোমরা তো দেখেছো আমি তোমাদের সাথে ঈশার সলাত পড়ে তোমাদের এখানেই শুয়ে পড়ি। কিন্তু এরপরে আমি বাইতুল মুকাদ্দাস গমন করি এবং সেখানে সলাত আদায় করি। এখন ফজরের সলাত তোমাদের সাথে পড়লাম যা তোমরা দেখলে।”
، فلما صلى الصبح وصلينا معه ، قال : يا أم هانئ ، لقد صليت معكم العشاء الآخرة كما رأيت بهذا الوادي ، ثم جئت بيت المقدس فصليت فيه ، ثم قد صليت صلاة الغداة معكم الآن كما ترين
আমরা দেখছি যে উম্মে হানী(রা.) এখানে বলছেন – নবী(ﷺ) ‘তাদের’ সঙ্গে সলাত আদায় করেছেন। মূল আরবিতে সব জায়গায় সর্বনামগুলো বহুবচনে আছে। অর্থাৎ উম্মে হানী(রা.) মোটেও বাড়ীতে একা ছিলেন না। বাড়ীর অন্য লোকেরাও সেখানে ছিলো। রেওয়ায়েতের পরবর্তী অংশে উল্লেখ আছেঃ
“…আমি [উম্মে হানী(রা.)] বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি এ [ইসরা ও মিরাজ এর] কথা লোকদের কাছে প্রকাশ করবেন না, অন্যথায় তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলবে ও আপনাকে কষ্ট দেবে।’ কিন্তু তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তাদের কাছে এ ঘটনা ব্যক্ত করবো।’ তখন আমি আমার এক হাবশি দাসীকে বললাম, ‘বসে আছো কেন? জলদি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে যাও, তিনি লোকদের কী বলেন তা শোনো, আর দেখো তারা কী মন্তব্য করে।’ (সীরাতুন নবী (সা.) – ইবন হিশাম, ২য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃষ্ঠা : ৭৬) অর্থাৎ বাড়ীতে উম্মে হানী(রা.) এর দাসী ছিলো বলেও উল্লেখ আছে।
নাস্তিক-মুক্তমনারা এমনভাবে অপপ্রচার চালায় যেন রাসুল(ﷺ) গোপনে উম্মে হানী(রা.) এর বাড়ী গিয়েছিলেন এবং তা ধামাচাপার জন্য মিরাজের কাহিনী বলেছেন (নাউযুবিল্লাহ) ! অথচ আলোচ্য রেওয়ায়েতে দেখা যাচ্ছে রাসুল(ﷺ) মোটেও গোপনে উম্মে হানী(রা.) এর বাড়ী যাননি বরং বাড়ীতে অন্যান্যরাও ছিলো। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে তাদের অপবাদ কতোটা অসার ও ভিত্তিহীন।
ধরা যাক একজন মানুষ শিশুকাল থেকে তার চাচার বাড়ীতে চাচাতো ভাই-বোনদের সাথে বেড়ে উঠেছেন। বড় হবার পর একদিন তিনি তার চাচাতো বোনের বাড়ীতে বেড়াতে গেলেন। বাড়ীতে পরিবারের অন্যরাও ছিলো। রাতের বেলা তিনি সে বাড়ীতেই ঘুমালেন।
এই গল্পে কি আপনি কোনো অস্বাভাবিকতা বা অশ্লীলতা পাচ্ছেন? গল্পের লোকটির মধ্যে কোনো লাম্পট্য পাচ্ছেন? পাচ্ছেন না। কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ এখান গল্পের ঐ লোকটি সম্পর্কে বাজে চিন্তা করবে না। কিন্তু বাংলার নাস্তিক-মুক্তমনারা তাদের অসুস্থ চিন্তাধারার কারণে এই গল্প থেকেও নানা অশ্লীল জিনিস বের করে ফেলতে পারবে। কোনো ভালো জিনিসকে কালিমালিপ্ত করতে এদের জুড়ি নেই। আসলে যার স্বভাব যেমন, সে তেমন জিনিসই অনুসন্ধান করে। কথায় আছে – ফুল থেকে মৌমাছি নেয় মধু আর ভিমরুল নেয় বিষ।
৫. নাস্তিকদের ডাবলস্টান্ডার্ড নীতি :
আলোচ্য রেওয়ায়েতের শেষাংশে উল্লেখ আছে
“রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বের হয়ে গিয়ে লোকদের এ ঘটনা জানালেন। তারা বিস্মিত হয়ে বললো, ‘হে মুহাম্মাদ! এ যে সত্য তার প্রমাণ? এমন ঘটনা তো আমরা কোনোদিন শুনিনি।’ তিনি বললেন, ‘প্রমাণ এই যে, আমি অমুক উপত্যকায় অমুক গোত্রের একটি কাফেলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। সহসা আমার বাহন জন্তুটির গর্জনে তারা ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের একটি উট হারিয়ে যায়। আমি তাদের উটটির সন্ধান দিই। আমি তখন শামের দিকে যাচ্ছিলাম। এরপর সেখান থেকে ফিরে আসার পথে যখন দাজনান পর্বতের কাছে পৌঁছি, তখন সেখানেও একটি কাফেলা দেখতে পাই। তারা সকলে নিদ্রিত ছিল। তাদের কাছে একটি পানিভরা পাত্র ছিল, যা কোনো কিছু দিয়ে ঢাকা ছিল। আমি সে ঢাকনা সরিয়ে তা থেকে পানি পান করি। এরপর তা আগের মতো করে ঢেকে রেখে দিই। আর এর প্রমাণ এই যে—সে কাফেলাটি এখন বায়যা গিরিপথ থেকে ‘সানিয়াতুত তানঈমে’ নেমে আসছে। তাদের সামনে একটি ধূসর বর্ণের উট আছে, যার দেহে একটি কালো ও আরেকটি বিচিত্র বর্ণের ছাপ আছে।”
উম্মে হানী(রা.) বলেন, “একথা শোনামাত্র উপস্থিত লোকেরা সানিয়ার দিকে ছুটে গেলো। তারা ঠিকই সম্মুখভাগের উটটিকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বর্ণনামতো পেলো। তারা কাফেলার কাছে তাদের পানির পাত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তারা বললো, ‘আমরা পানির একটি ভরা পাত্রে ঢাকনা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। জাগ্রত হওয়ার পর পাত্রটিকে যেমন রেখেছিলাম তেমনই ঢাকা পাই, কিন্তু ভেতর পানিশূন্য ছিল।’ তারা অপর কাফেলাকেও জিজ্ঞেস করলো। সে কাফেলাটি তখন মক্কাতেই ছিল। তারা বললো, ‘আল্লাহর কসম! তিনি সত্যই বলেছেন। তিনি যে উপত্যকার কথা বলেছেন, সেখানে ঠিকই আমরা ভয় পেয়েছিলাম। তখন আমাদের একটি উট হারিয়ে যায়। আমরা অদৃশ্য এক ব্যক্তির আওয়াজ শুনতে পাই,যে আমাদের উটটির সন্ধান দিচ্ছিলো। সেমতে আমরা উটটি ধরে ফেলি।” (সীরাতুন নবী (সা.) – ইবন হিশাম, ২য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃষ্ঠা : ৭৬-৭৭)
আমরা দেখছি যে এখানে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) উপস্থিত লোকদেরকে তাঁর ইসরা-মিরাজ ভ্রমণের সত্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। সকলকে এমন কিছু জিনিস বলে দিয়েছেন যা সাধারণ কোনো মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব না। যার দ্বারা সকলের সামনে তাঁর নবুয়তের সত্যতা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিলো। নাস্তিক-মুক্তমনারা ঘটনার শুরুর অংশ থেকে অপব্যাখ্যা করে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর নামে কাল্পনিক অশালীন অভিযোগ তৈরি করে, কিন্তু বর্ণনার শেষাংশে যে ইসরা-মিরাজের তথা তাঁর নবুয়তের সত্যতা প্রমাণিত হয়ে গেছে, তা কিন্তু উল্লেখ করে না! কেন এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি??
তারা অবশ্যই বর্ণনার শেষাংশ উল্লেখ করতে চাইবে না কারণ ওটা উল্লেখ করলে তো তাদের ভ্রান্ত মতাদর্শের কবর রচনা হয়ে যায়। মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মুজিজা এবং নবুয়ত স্বীকার করে নিতে হয়। কাজেই বর্ণনার ঐ অংশটা তাদের ধামাচাপা দিয়ে রাখতেই হয়।