শয়তান জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়ে আল্লাহকে বলেছিল যে, সে মানুষকে জাহান্নামী করার জন্য বেশ কিছু প্রজেক্ট হতে নিবে তার মধ্যে অন্যতম হল আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেওয়া। ‘তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব।’(সূরা নিসা-১১৯) দাজ্জাল হচ্ছে শয়তানের অন্যতম প্রধান মুখপাত্র। দাজ্জালের আগমনের মাধ্যমে শয়তানের এজেন্ডা পূর্ণতায় পৌছানোর চেষ্টা করা হবে। আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন ঘটানোর দাজ্জালীয় সংস্করণ হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডারবাদ বা রূপান্তরকামীতা।
ব্যক্তি স্বাধীনতার ধ্বজাধারী পশ্চিমারা ব্যক্তির ইচ্ছাকে প্রমোট করতে করতে এখন পুরোপুরিভাবে ব্যক্তি তথা নফসের গোলামে পরিণত হয়েছে। এজন্য মস্তিস্ক বিকৃত মনের মানবতা বিরোধী, সমাজ বিরোধী, সভ্যতা বিরোধী খেয়াল খুশিকেও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে সেই সাথে মুসলিম বিশ্বে দাজ্জালীয় এই এজেন্ডাকে বাস্তবায়নের জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছে। এর এক জলন্ত উদাহরণ হলো ‘ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ’ (ঞৎধহংমবহফবৎরংস) বা রূপান্তরকামীতা। অনেকে একে ‘জেন্ডার আইডেন্টিটি’ বা লিঙ্গ পরিচয় মতবাদও বলে থাকেন।
ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের প্রধান দাবি:
জন্মগত দেহ যা-ই হোক না কেন, নিজেকে যে নারী দাবি করবে তাকে নারী বলে মেনে নিতে হবে, নিজেকে যে পুরুষ দাবি করবে তাকে মেনে নিতে হবে পুরুষ বলে, আইনী ও সামাজিকভাবে।
মানুষ ইচ্ছেমতো পোশাক পরবে, ইচ্ছেমতো ওষুধ আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বদলে নেবে নিজের দেহকে। আর কেউ যদি অস্ত্রোপচার না করেই নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের বলে দাবি করে, তাও মেনে নিতে হবে মুখ বুজে।
রাষ্ট্র ও সমাজ কোনো বাধা দিতে পারবে না, বরং ‘সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী’ হিসেবে এ ধরনের মানুষকে দিতে হবে বিশেষ সুবিধা। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একদম ছোটবেলা থেকে সবাইকে শেখাতে হবে যে, মানুষের মনটাই গুরুত্বপূর্ণ; দেহ না।
এই মতবাদ বলে, কোন পুরুষের যদি ‘নিজেকে নারী বলে মনে হয়’, তাহলে সে একজন নারী। সমাজ ও আইন নারী হিসেবেই তাকে বিবেচনা করবে। সেই পুরুষ শারীরিকভাবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হোক, তিন বাচ্চার বাপ হোক, কিছু আসে যায় না তাতে।
ট্রান্সজেন্ডারবাদ বলে, কোন নারীর নিজেকে যদি পুরুষ মনে হয়, তাহলে সে পুরুষ। যদিও তার মাসিক হয়, সে গর্ভবতী হয়, শারীরিকভাবে সে হয় ১০০% সুস্থ। নিজেকে পুরুষ মনে করা নারী যদি সন্তানের জন্ম দেয়, তাহলে সেটা ট্রান্সজেন্ডারবাদের ভ্রান্তির প্রমাণ না। বরং ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের চোখে এটাই প্রমাণ করে যে, ‘পুরুষও সন্তান জন্ম দিতে পারে’!
এই মতবাদ অনুযায়ী কোনো বালকের যদি ‘মনে হয়’ সে বালিকা অথবা কোনো বালিকার যদি মনে হয় সে বালক, তাহলে এই ‘মনে হওয়া’র ভিত্তিতে সেই বালক কিংবা বালিকাকে চাহিবামাত্র হরমোন ট্রিটমেন্ট আর বিভিন্ন অপারেশনের মাধ্যমে নিজের শরীরকে বদলে ফেলার ‘অধিকার’ দিতে হবে। তার এই ‘মনে হওয়া’র চিকিৎসা করা যাবে না, বরং বদলে দিতে হবে শরীরকে।
আল্লাহকে বাদ দিয়ে মানুষ বিভিন্ন জিনিসের পূজা করে যেমন প্রকৃতি, চন্দ্র, সূর্জ, আগুন, বৃক্ষ, গাভি, শয়তান ইত্যাদি। কিন্ত আধুনিক বিশ্বে সভ্যতার অন্তরালে নব্য জাহেলরা নফস বা মনের পূজা শুরু করেছে। আল্লাহর জায়গায় তারা তাদের নফসকে বসিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যথার্থই বলেছেন। মহান আল্লাহর বাণী-
أَرَءَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلٰهَهُۥ هَوٰىهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا
আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন?
أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ ۚ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعٰمِ ۖ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا
আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত। (সূরা ফুরকান-৪৩-৪৪)
বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদ:
১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৩, দৈনিক প্রথম আলো-তে প্রকাশিত” নারী থেকে পুরুষ হয়েছেন তিনি, এখন জটিলতা বাংলাদেশ রেলওয়ের “চাকরিতে” শিরোনামের প্রতিবেদনে শারমিন আক্তার ঝিনুক নামে এক নারীর কথা বলা হয়েছে। এই নারী শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ কিন্তু অন্য ‘নারীর প্রতি আকৃষ্ট’ হবার কারণে ‘নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত’ হয়েছেন তিনি। নতুন নাম নিয়েছেন জিবরান সওদাগর।
তার ভাষায়, জিবরান বলেন, ‘আমি ছিলাম নারী। মাসিক হওয়াসহ সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু যত বড় হচ্ছিলাম, বুঝতে পারছিলাম আমি অন্য ছেলে বা পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার চেয়ে নারীর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছি। স্কুলড্রেসের ওড়না পরতে বা মেয়েদের মতো পোশাক পরতে ভালো লাগতো না। একটা সময় একজন মেয়ের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক হয়। চার বছর সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেই মেয়ে চলে যাওয়ার পর মনে হয়, আমি পুরুষ হলে তো ও এভাবে চলে যেতো না।…
প্রথম আলো কার্যালয়ে এসে জিবরান বলেন, ২০২১ সালে তিনি ভারত থেকে স্তন ও জরায়ু কেটে ফেলা, পুরুষাঙ্গ পুনঃস্থাপনসহ মোট তিনটি বড় অস্ত্রোপচার করেছেন।’
সূত্র: নারী থেকে পুরুষ হয়েছেন তিনি, এখন জটিলতা বাংলাদেশ রেলওয়ের চাকরিতে, দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৯,২০২৩
https://www.prothomalo.com/bangladesh/goznhbeb
এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে শারমিন আক্তার নামের এ নারী শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। আরেকজন নারীর প্রতি তার বিকৃত কামনা ছিল। এই কামনাকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য তিনি নিজেকে ‘পুরুষে রূপান্তরিত’ করেছেন। এখন আবদার করছেন আইন ও সমাজ তাকে যেন মেনে নেয় পুরুষ হিসেবেই।
বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে অন্যতম হো চিন মিন ইসলাম। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠায় আইন তৈরির দাবিও জানিয়ে এসেছেন তিনি। ট্রান্সজেন্ডারবাদ আসলে কী বেশ খোলাখুলি আলোচনা করেছেন এই অ্যাক্টিভিস্ট। তার বক্তব্যগুলো দেখা যাক। তিন বছর আগের এক সাক্ষাৎকারে তাকে বলতে দেখা যাচ্ছে,
‘আমার পুরুষাঙ্গ আছে কিন্তু আমি একজন নারী। আমার বুকে পশম আছে, মুখে দাড়ি ওঠে তাসত্ত্বেও আমি একজন নারী। শুধু যোনী আর স্তন দিয়ে আপনি একজন নারীকে বিচার করতে পারেন না… আমি পুরুষের শরীরে জন্মেও আসলে পুরুষ নই… এই ধরনের পুরুষের শরীর নিয়ে জন্মায় যে বাচ্চারা, কিন্তু একটা সময় পর গিয়ে চিন্তা করে যে তার শরীরটা ভুল…বা তার শরীরের সাথে তার মনের, তার সত্তার একটা সংঘাত হয়।’
সূত্র: পুরুষের শরীরে নারী, ইউটিউব, Think Bangla. https://www.youtube.com/watch?v=qlqFnJFjNI
৭ই অক্টোবর ২০২৩ এ প্রথম আলোতে প্রকাশিত’ অস্ত্রোপচার করে পুরুষ থেকে নারী হয়েছি, গোপন করার কিছু নেই হো চি মিন ইসলাম’ শিরোনামের প্রতিবেদন থেকে,
হো চি মিন ইসলাম বলেন, আমার শরীরটা পুরুষের ছিল, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে নারী ভাবতাম। অবশেষে অস্ত্রোপচার করে পুরুষ থেকে নারী হয়েছি, গোপন করার কিছু নেই। এখন আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে একজন নারী।
সূত্র: অস্ত্রোপচার করে পুরুষ থেকে নারী হয়েছি, গোপন করার কিছু নেই: হো চি মিন ইসলাম। (দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ৭, ২০২৩) https://www.prothomalo.com/bangladesh/jretveki
হো চি মিন ইসলামের কথা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, ট্রান্সজেন্ডারবাদের সাথে শারীরিক কোনো সমস্যার সম্পর্ক নেই। তাদের শরীর সুস্থ, সমস্যা মনে। লক্ষ্য করার মতো আরেকটা বিষয় হলো, হো চি মিন ইসলাম ‘লিঙ্গ পরিবর্তন অপারেশন করেছেন’ ২০২৩ সালে। কিন্তু এর কমপক্ষে তিন বছর আগে থেকেই সামাজিক ও আইনীভাবে তাকে এবং তার মতো অন্যদের নারী হিসেবে মেনে নেওয়ার দাবি করে আসছেন তিনি।
অর্থাৎ, তাদের দাবি হলো অস্ত্রোপচার হোক বা না হোক, যখন থেকে কেউ নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের বলে দাবি করা শুরু করবে, তখন থেকেই সামাজিক ও আইনীভাবে এ দাবি মেনে নিতে হবে।
২০২২ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারদের সুরক্ষায় আইন হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-
বৈষম্য ও লাঞ্ছনার শিকার ট্রান্সজেন্ডারদের সুরক্ষা ও অধিকার এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘ট্র্যান্সজেন্ডার অধিকার সুরক্ষা আইন’ নামের আইনটি পাস হলে বৈষম্য থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলবে ট্রান্সজেন্ডারদের। বৃহস্পতিবার এমন তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক রবিউল ইসলাম।
উপপরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতের জন্য ট্র্যান্সজেন্ডার অধিকার সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য এই জনগোষ্ঠী ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগামী মাসে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সবার মতামত নিয়ে একটি আইন তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর এটি সংসদে উপস্থাপন হবে। তারপর বাস্তবায়ন করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আইনটি বাস্তবায়িত হলে এই কমিউনিটির মানুষগুলো আর সেবা নিতে বৈষম্যের শিকার হবে না। বিদেশ যেতে পাসপোর্ট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে জটিলতার নিরসন হবে। আইন দ্বারা তাদের অধিকার নিশ্চিত হবে।’ সূত্র: ট্রান্সজেন্ডারদের সুরক্ষায় হচ্ছে আইন। (নিউজবাংলা২৪, মার্চ ১০, ২০২২) https://www.newsbangla.com/news/182775/The-law-is-to-protect-transgender-people
এখান থেকে বাংলাদেশে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠার ধাপগুলো স্পষ্টভাবে জানা যায়।
প্রথম ধাপে, ‘ট্র্যান্সজেন্ডার অধিকার সুরক্ষা’র জন্য আইনের খসড়া তৈরি হবে।
দ্বিতীয় ধাপে, খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
তৃতীয় ধাপে, আইন মন্ত্রণালয় আইন চূড়ান্ত করবে।
চতুর্থ ধাপে, আইন সংসদে উত্থাপন করা হবে এবং সেখানে তা পাশ হয়ে যাবে।
এই চার যাপের মধ্যে আমরা এখন ঠিক কোন ধাাপে আছি?
দ্বিতীয় ধাপ শেষ, আমরা এখন আছি তৃতীয় ধাপে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত ‘ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইন দ্রুত পাশ হবে’ শিরোনামের এক খবরে বলা হচ্ছে-
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আমরা ট্র্যান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইনের খসড়া প্রণয়ন করতে পেরে খুশি। এই কমিউনিটির সদস্যদের সমাজের মূলস্রোতধারায় আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজনে ‘ট্যান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন’ এর খসড়া কমিউনিটি কনসালটেশন কর্মশালয় একথা বলেন তিনি। এ কর্মশালা হোটে ইন্টার কন্টিনেন্টাল, শাহবাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সূত্র: ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার রক্ষার আইন দ্রুত পাশ হবে। (সাম্প্রতিক দেশকাল, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩)
অর্থাৎ, ২০২২ সালে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ নাগাদ খসড়া তৈরি হয়ে গেছে। ধারণা করা যায়, ২০২৪ বা বড়জোর ২০২৫ এর মধ্যে এই আইন সংসদে পাশ হয়ে যাবার জোরালো সম্ভাবনা আছে। সে সময়ে বাংলাদেশে যে সরকারই থাকুক, সরাসরি অ্যামেরিকার বিরোধিতা করে এ আইনের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নেবে, এ সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। বিশেষ করে আগের ধাপগুলোর কাজ যখন এতো দ্রুত এগিয়ে গেছে।
পাঠ্যপুস্তক: এ তো গেল আইনের কথা। সামাজিকভাবে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদকে বৈধতা দেওয়ার নানা প্রক্রিয়া চলছে। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডারবাদ ও বিকৃত যৌনতার স্বাভাবিকীকরণ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ঘঈঞই সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে ৫১-৫৬ পৃষ্ঠায় ‘শরীফার গল্প’ শিরোনামের লেখায় সরাসরি ট্রান্সজেন্ডারবাদের দীক্ষা দেওয়া হয়েছে। ৫১ পৃষ্ঠায় মূল চরিত্র শরীফা বলছে,
“আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে..
শরীফা
শরীফা বললেন, যখন আমি তোমাদের স্কুলে পড়তাম তখন আমার নাম ছিল শরীফ আহমেদ। আনুচিং অবাক হয়ে বলল, আপনি ছেলে থেকে মেয়ে হলেন কী করে? শরীফা বললেন, আমি তখনও যা ছিলাম এখনও তাই আছি। নামটা কেবল বদলেছি। ওরা শরীফার কথা যেন ঠিকঠাক বুঝতে পারল না।
আনাই তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনার বাড়ি কোথায়? শরীফা বললেন, আমার বাড়ি এখান থেকে বেশ কাছে। কিন্তু আমি এখন দূরে থাকি। আনাই মাথা নেড়ে বলল, বুঝেছি, আমার পরিবার যেমন অন্য জায়গা থেকে এখানে এসেছে, আপনার পরিবারও তেমন এখান থেকে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে। শরীফা বললেন, তা নয়। আমার পরিবার এখানেই আছে। আমি তাদের ছেড়ে দূরে গিয়ে অচেনা মানুষদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেছি। এখন সেটাই আমার পরিবার। শরীফা নিজের জীবনের কথা বলতে শুরু করলেন।
শরীফার গল্প
ছোটবেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলত। কিন্তু আমি নিজে একসময়ে বুঝলাম, আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে। আমি মেয়েদের মতো পোশাক পরতে ভালোবাসতাম। কিন্তু বাড়ির কেউ আমাকে পছন্দের পোশাক কিনে দিতে রাজি হতো না। মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ করতে আমার বেশি ভালো লাগত। বোনদের সাজবার জিনিস দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে সাজতাম। ধরা পড়লে বকাঝকা, এমনকি মারও জুটত কপালে। মেয়েদের সঙ্গে খেলতেই আমার বেশি ইচ্ছে করত। কিন্তু মেয়েরা আমাকে খেলায় নিতে চাইত না। ছেলেদের সঙ্গে খেলতে গেলেও তারা আমার কথাবার্তা, চালচলন নিয়ে হাসাহাসি করত। স্কুলের সবাই, পাড়া-পড়শি এমনকি বাড়ির লোকজনও আমাকে ভীষণ অবহেলা করত। আমি কেন এ রকম একথা ভেবে আমার নিজেরও খুব কষ্ট হতো, নিজেকে ভীষণ একা লাগত।
এ গল্পে শরীফা নিজেই স্বীকার করছে, সে ছোটবেলায় ছেলে ছিল। কিন্তু যখন আস্তে আস্তে বড় হলো তখন সেই শরীফ আহমেদই নিজেকে মেয়ে ভাবতে শুরু করলো এবং মেয়েদের মতো আচরণ করতে লাগলো। আর এটাই তার ভালো লাগে।
৫৫ এবং ৫৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
“আমরা যে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখেই কাউকে ছেলে বা মেয়ে বলছি, সেটা হয়তো সবার ক্ষেত্রে সত্যি নয়।’ ….এখন বুঝতে পারছি, ছেলে-মেয়েদের চেহারা, আচরণ, কাজ বা অন্যান্য বৈশিষ্টোর কোনো স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম নেই।’
…একটি শিশু যখন জন্ম নেয় তখন তার শরীর দেখে আমরা ঠিক করি সে নারী নাকি পুরুষ। এটি হলো তার জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে একজন মানুষের কাছে সমাজ যে আচরণ প্রত্যাশা করে তাকে আমরা ‘জেন্ডার’ বা ‘সামাজিক লিঙ্গ’ বলি। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে তার জেন্ডার ভূমিকা না মিললে প্রথাগত ধারণায় বিশ্বাসী মানুষেরা তাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।’
অর্থাৎ, একজন মানুষ পুরুষের শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও সে যদি কোনো এক বয়সে নিজেকে নারী দাবী করে তাহলে সে নারী। আবার নারী দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করা কেউ যদি নিজেকে পুরুষ দাবী করে তাহলে সে পুরুষ। যতোক্ষণ না অন্যের কোনো ক্ষতি হচ্ছে ততোক্ষণ যা খুশি তা-ই করা যায়। যারা এটা মেনে নেবে না তারা সেকেলে, পশ্চাৎপদ।
শিশুকিশোররা সহজে প্রভাবিত হয়, নতুন জিনিসের প্রতি তাদের থাকে সহজাত আগ্রহ। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোমলমতি কিশোরদের সামনে বিকৃতি ও অসুস্থতাকে স্বাভাবিক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। বয়ঃসন্ধিকালে এমনিতেই নানা মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। তার উপর লিঙ্গ নিয়ে এমন বিভ্রান্ত ধারণায় মগজধোলাই কিশোর কিশোরীদের জীবন বিষিয়ে দেবে। জন্ম নেবে নানা ধরনের অসুখ ও অসঙ্গতি।
বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদের প্রসারে কারা শয়তানের ভ’মিকা রাখছে ?
মিডিয়া:
বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদের প্রসারে পুরোদমে কাজ করছে মিডিয়া। ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে ইতিবাচকভাবে নানা ধরনের প্রতিবেদন নিয়মিত আসছে নিউজ মিডিয়াতে। গুগল এবং ইউটিউবে ট্রট্রান্সজেন্ডার লিখে সার্চ দিয়ে যে কেউ এ কথা যাচাই করে দেখতে পারেন। নিউজ মিডিয়ার পাশাপাশি বিনোদন জগতের মাধ্যমেও ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সুন্দরী প্রতিযোগিতাতেও নারী সাজা পুরুষদের স্থান দেওয়া হচ্ছে। বলা বাহুল্য, এগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজে আলোড়ন তৈরি করা।
এনজিও ও অ্যাক্টিভিস্ট:
ট্রান্সজেন্ডারবাদের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বিভিন্ন এনজিও ও অ্যাক্টিভিস্টরা। সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডারবাদসহ নানা বিকৃতির প্রচার ও প্রসারে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দেশব্যাপী এনজিও ও অ্যাক্টিভিস্ট: ট্রান্সজেন্ডারবাদের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বিভিন্ন এনজিও ও অ্যাক্টিভিস্টরা। সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডারবাদসহ নানা বিকৃতির প্রচার ও প্রসারে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদন আনাচ্ছে, দেশব্যাপী ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করছে ‘৩০টি কমিউনিটি বেসড অর্গানাইজেশন’।’ ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করা দেশীয় এনজিওগুলোর সাইটে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সাথে সম্পর্কের কথা খোলাখুলি বলা আছে, যে কেউ যাচাই করে নিতে পারেন। উিল্লেখ্য, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনগুলি সরাসরি এলজিবিটি অর্থাৎ সমকামীতা ও ট্রান্সজেন্ডারবাদের প্রসারে কাজ করছে, আর কোনগুলি হিজড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্য গড়ে উঠেছিল, তা পরিষ্কার না।
ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্টরা পৌঁছে গেছে প্রধানমন্ত্রীর অফিসেও। ১০ই অগাস্ট, ২০২৩-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রান্সজেন্ডার হো চি মিনের সাক্ষাৎ, ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের জন্য আজকের দিনটি মাইলফলক বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সজেন্ডার হো চি মিন ইসলাম। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর হো চি মিন ইসলাম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ কথা বলেন। সূত্র: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রান্সজেন্ডার হো চি মিনের সাক্ষাৎ, সময় নিউজ, অগাস্ট ১০, ২০২৩ https://www.somoynews.tv/news/2023-10-18/tHUZAt2H
খুব শীঘ্রই ট্রান্সজেন্ডারবাদ সংসদেও পৌঁছে যাবে, আর তারপর রাষ্ট্রযন্ত্রের সুবাদে ঢুকে পড়বে ঘরে ঘরে, এমন আশঙ্কা এখন আর
অমূলক মনে হবার কথা না।
ট্রান্সজেন্ডারবাদের সাথে ইসলাম ও সমাজের সংঘর্ষ কোথায়?
ট্রান্সজেন্ডারবাদ এমন এক কালবৈশাখী ঝড় যদি এখনিই মোকাবেলা করা না যায় তাহলে সে ঝড়ে ধর্মীয় ও সামাজি মূল্যবোধ তছনছ হয়ে যাবে। পুরো সমাজ কাঠামো উল্টে যাবে।
মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা:
ট্রান্সজেন্ডার মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে চরম সীমালঙ্গন। এটি আল্লাহর সৃষ্টিতে ইচ্ছাকৃত পরিবর্তন আনা, এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত পরিবার ও সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিদ্রোহ। মুসলিম হিসেবে এ ধরনের চরম সীমালঙ্গন আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না। আল্লাহর বাণী-
وَلَأُضِلَّنَّهُمْ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَءَامُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ ءَاذَانَ الْأَنْعٰمِ وَلَءَامُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ ۚ وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطٰنَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللَّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا
তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ ۖ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطٰنُ إِلَّا غُرُورًا
সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে আশ্বাস দেয়। শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা সব প্রতারণা বৈ নয়। (সূরা নিসা-১১৯-১২০)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ. تَابَعَهُ عَمْرٌو أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ.
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সব পুরুষকে লা’নত করেছেন যারা নারীর বেশ ধরে এবং ঐসব নারীকে যারা পুরুষের বেশ ধরে। (আ.প্র. ৫৪৫৭, ই.ফা. ৫৩৫৩) ‘আমরও এরকমই বর্ণনা করেছেন। আমাদের কাছে শু‘য়বা এ সংবাদ দিয়েছেন। (বুখারী-৫৮৮৫)
عَنْ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ عَلْقَمَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ لَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُوْتَشِمَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আল্লাহ্ লা’নাত করেছেন ঐ সমস্ত নারীর প্রতি যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকণ করে, নিজ শরীরে উল্কি অংকণ করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভূরু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। সে সব নারী আল্লাহ্র সৃষ্টিতে বিকৃতি আনয়ন করে। (বুখারী-৪৮৮৬)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ .
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত:তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন ঐসব পুরুষকে যারা নারীর অনুরুপ পোশাক পরে এবং ঐসব নারীকে যে পুরুষের অনুরুপ পোশাক পরিধান করে। (আবু দাউদ-৪০৯৮)
সমকামিতার স্বাভাবিকীকরণ :
ট্রান্সজেন্ডারের অবস্যম্ভাবী পরিণতি হলো সমকামিতাসহ অন্যান্য যৌন বিকৃতি। সমকামিতা এতো জঘন্য অপরাধ যে, আল্লাহ তা‘আলা এ অপরাধের কারণে হযরত লূত আ. এর কওমকে অত্যন্ত কঠিন শাস্তি দিয়েছেন। মহান আল্লাহর বাণী,
فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِينَ
অতঃপর সুর্যোদয়ের সময় তাদেরকে প্রচন্ড একটি শব্দ এসে পাকড়াও করল।
فَجَعَلْنَا عٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ
অতঃপর আমি জনপদটিকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর কঙ্করের প্রস্থর বর্ষণ করলাম।
إِنَّ فِى ذٰلِكَ لَءَايٰتٍ لِّلْمُتَوَسِّمِينَ
নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা হিজ্র-৭৩-৭৫)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” مَنْ وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ ” . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ جَابِرٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَإِنَّمَا يُعْرَفُ هَذَا الْحَدِيثُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَرَوَى مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ عَمْرِو بْنِ أَبِي عَمْرٍو فَقَالَ ” مَلْعُونٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ ” . وَلَمْ يَذْكُرْ فِيهِ الْقَتْلَ وَذَكَرَ فِيهِ مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى بَهِيمَةً . وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” اقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ ” . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ فِي إِسْنَادِهِ مَقَالٌ وَلاَ نَعْرِفُ أَحَدًا رَوَاهُ عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ غَيْرَ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ الْعُمَرِيِّ . وَعَاصِمُ بْنُ عُمَرَ يُضَعَّفُ فِي الْحَدِيثِ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ . وَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْعِلْمِ فِي حَدِّ اللُّوطِيِّ فَرَأَى بَعْضُهُمْ أَنَّ عَلَيْهِ الرَّجْمَ أَحْصَنَ أَوْ لَمْ يُحْصِنْ وَهَذَا قَوْلُ مَالِكٍ وَالشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ . وَقَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ فُقَهَاءِ التَّابِعِينَ مِنْهُمُ الْحَسَنُ الْبَصْرِيُّ وَإِبْرَاهِيمُ النَّخَعِيُّ وَعَطَاءُ بْنُ أَبِي رَبَاحٍ وَغَيْرُهُمْ قَالُوا حَدُّ اللُّوطِيِّ حَدُّ الزَّانِي وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِيِّ وَأَهْلِ الْكُوفَةِ .
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যে মানুষকে লূত সম্প্রদায়ের কুকর্মে (সমকামিতায়) নিয়োজিত পাবে সেই কুকর্মকারীকে এবং যার সাথে কুকর্ম করা হয়েছে তাকে মেরে ফেলবে। (তিরমিযি-১৪৫৬, সহীহ্ ইবনু মা-জাহ-৩৫৬১)
জাবির ও আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি শুধু উল্লেখিত সনদসূত্রেই আমরা জেনেছি। এ হাদীসটি আমর ইবনু আবী আমরের সূত্রে মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যে মানুষ লূত সম্প্রদায়ের কুকর্ম করে সে অভিশপ্ত”। এই বর্ণনায় ‘হত্যা করার’ উল্লেখ নেই। এতে আরো আছেঃ “যে মানুষ পশুর সাথে কুকর্ম করে সেও অভিশপ্ত”। উপরে উল্লেখিত হাদীসটিকে আসিম ইবনু উমার সুহাইল ইবনু আবূ সালিহ -এর সূত্রে, তিনি তার বাবার সূত্রে, তিনি আবূ হুরাইরা (রাঃ) -এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “এ কাজের কর্তা ও কর্ম দুজনকেই মেরে ফেল”। এ হাদীসের সনদ বিতর্কিত। সুহাইলের সূত্রে এ হাদীসটি আসিম ব্যতীত আর কেউ বর্ণনা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। আসিমের স্মরণশক্তি হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল বলে সমালোচিত। অভিজ্ঞ আলিমদের মধ্যে লাওয়াতাতকারীর (সমকামীর) শাস্তির ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সমকামীকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করতে হবে, সে বিবাহিত বা অবিবাহিত যাই হোক। এই মত প্রকাশ করেছেন ইমাম মালিক, শাফিঈ, আহামাদ ও ইসহাক। অন্য একদল ফিকহবিদ তাবিঈ যেমন হাসান বাসরী, ইবরাহীম নাখঈ, আতা ইবনু আবূ রাবাহ প্রমুখ বলেছেন, সমকামীর শাস্তি যিনাকারীর শাস্তির মতই। এই মতে সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসীদের।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَقِيلٍ، أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرًا، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي عَمَلُ قَوْمِ لُوطٍ ”.
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আকীল (রহঃ) থেকে বর্ণিত:তিনি বলেন, জাবির (রাঃ) -কে আমি বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যে কুকর্মটি আমার উম্মাতের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সর্বাধিক ভয় করি তা হল লূত সম্প্রদায়ের কুকর্ম। (তিরমিযি-১৪৫৬)
ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের অবধারিত ফলাফল হলো সমকামিতার স্বাভাবিকীকরণ এবং বৈধতা দেওয়া। মনে করুন, জাামাল নামের এক পুরুষ নিজেকে নারী বলে দাবি করা শুরু করলো। আইন তাকে নারী বলে মেনে নিলো। এখন বিয়ে কিংবা যৌনচাহিদা মেটাতে গিয়ে সে কী করবে? সে যদি কোনো পুরুষকে বেছে নেয়, তাহলে সেটা হবে সমলিঙ্গের সাথে যৌনতা। কারণ জামাল যদিও নিজেকে নারী দাবি করছে,কিন্তু আসলে সে একজন পুরুষ সে যাকে বেছে নিয়েছে সেও পুরুষ। কাজেই এটা সমলিঙ্গের মধ্যে যৌনতা। যদিও ‘দূর থেকে’ তাদেও স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকা মনে হয়।
অন্যদিকে জামাল যদি কোনো নারীকে বেছে নেয়, তাহলে কার্যত সেটা সমলিঙ্গের মধ্যে যৌনতা হবে না। কিন্তু আপাতভাবে, সমাজের চোখে, যারা বিস্তারিত জানবে না তাদের কাছে একে মনে হবে সমকামিতা। কারণ জামাল নিজেকে নারী হিসেবে উপস্থাপন করে একজন নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করছে। অর্থাৎ যা-ই বেছে নেওয়া হোক না কেন, দিন শেষে সমকামিতার স্বাভাবিকীকরণ ঘটবে।
সামাজিক ও আইনী সমস্যা:
ট্রান্সজেন্ডারবাদ স্বাভাবিকীকরণের কিছু আইনী ও সামাজিক সমস্যা সহজেই চোখে পড়ে। নিজেকে পুরুষ দাবি করা নারী উত্তরাধিকার ভাগ পাবে কীভাবে? অ্যাক্টিভিস্টদের দাবি হলো, যে নিজেকে পুরুষ দাবি করবে তাকে বাবার সম্পত্তি থেকে পুরুষের সমান ভাগই দিতে হবে। খসড়া আইনেও এমনটাই থাকার কথা। এমনটাই হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। এধরণের ফলাফল সমাজে কেমন বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে?
নিজেকে নারী দাবি করা পুরুষ কি নারীদের বাথরুম, নারীদের কমনরুম ব্যবহার করবে? আপনি কি চাইবেন আপনার বোন, স্ত্রী বা সন্তান কোন ট্রান্সনারীর সাথে একই বাথরুম ব্যবহার করুক? কী হবে কোন পুরুষ যখন শাড়ি বা সালওয়ার কামিজ পরে মেয়েদের সালাতের জায়গায় এসে উপস্থিত হবে? নিজেকে পুরুষ দাবি করা নারী কি সালাত আদায় করবে পুরুষদের সাথে একই কাতারে?
ধানমন্ডি বয়েজে ক্লাস নাইনের শারীরিকভাবে সুস্থ কোনো ছাত্র যদি হঠাৎ নিজেকে মেয়ে দাবি করা শুরু করে এবং রাষ্ট্র যদি তাকে ভিকারুননিসা স্কুলে ভর্তি হবার সুযোগ করে দেয়, তাহলে সেটা কি মেনে নেওয়া উচিত হবে? কিশোরদের ছোট্ট বালিকা আর কিশোরীদের বাথরুমে কিংবা কমনরুমে ঢুকতে দেওয়ার ফলাফল কি খুব একটা ভালো হবে?
ট্রান্সজেন্ডারবাদকে বৈধতা দেওয়ার অর্থ সামাজিকভাবে যে জায়গাগুলো নারীদের অন্য নির্ধারিত সেখানে পুরুষের অনুপ্রবেশের পথ করে দেওয়া। একটু চিন্তা করলে এ সমস্যাগুলো যে কেউ ধরতে পারবেন।
পরিবার ও সমাজের অনিবার্য পতন:
ট্র্যান্সজেন্ডারবাদকে গ্রহণ করার ফলাফল হলো বিভিন্ন যৌন বিকৃতিকে স্বাভাবিক ও বৈধ বলে মেনে নেওয়া। নারী এবং পুরুষের মাঝের বিভেদ, সীমারেখা মুছে দেওয়া। যে নিজেকে যা দাবি করবে তা গ্রহণ করে নেওয়া। কারো শরীরের দিকে আর তাকানো হবে না। শুধু দাবির দিকে তাকানো হবে। দেহ যদি অর্থহীন হয় তাহলে অর্থহীন হয়ে যাবে নারী, পুরুষ, বিয়ে, পিতা, মাতা, পুত্র, কন্যা এবং পরিবারের মতো ধারণাগুলোও। ট্রান্সজেন্ডারবাদ মূলত ভাষাগত, চিন্তাগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আইনীভাবে এই বিভাজনগুলো মুছে দেয়ার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা আন্দোলন। এ মতবাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো সৃষ্টি ও সমাজের সব কাঠামো ভেঙে ফেলা।
বেশ ক’বছর ধরে দেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদের স্বাভাবিকীকরণের কাজ চলছে। এসব কর্মতৎপরতার কিছু কিছু ফলাফল সম্প্রতি আমাদের সামনে আসলেও, এর সত্যিকারের মাত্রা এবং পরিধি এখনো অধিকাংশেরই অজানা। ব্যাপারটাকে স্রেফ কিছু মানসিক রোগী কিংবা বিকৃত রুচির মানুষের উদ্ভট কর্মকাণ্ড মনে করবেন না। এর পেছনে আছে বিশাল এবং প্রচণ্ড শক্তিশালী এক নেটওয়ার্ক। আমরা যখন প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে ভাবছি, ওরা তখন সামনের দশটা ধাপ ভেবে রেখেছে। বছরখানেকের মধ্যে হয়তো আমাদের এ বাংলাতেই ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের বৈধতা দেওয়া হবে। বিষাক্ত এ মতবাদ গ্রাস করে নেবে আমাদের সমাজকে। ট্রান্সজেন্ডারবাদের হুমকি নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন আমাদের প্রত্যেকের।